নীড়  দূর-শিক্ষাকেন্দ্র  পাঠ্যপুস্তক  দ্বিতীয় পত্র - অধ্যায়: চার
বাংলা ভাষা ডিপ্লোমা পাঠক্রম
rotateআপনার মুঠোফোনটিকে ল্যান্ডস্কেপে রাখুন
প্রথম ষান্মাসিক - দ্বিতীয় পত্র
বাংলা ভাষা বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র   ❐   অধ্যায় -  পাঁচ
বাংলা ভাষার বাক্যতত্ত্ব
 
৪.০   উদ্দেশ্য   

এ পর্বটিতে যা জানতে পারবেন —

  1. বাংলা বাক্যের সংজ্ঞা, স্বরূপ, গঠন এবং প্রকার
  2. বাচ্য পরিবর্তন
  3. বাংলা বাগবিধির বৈচিত্র্য এবং ধরণ
  4. সাধুভাষা চলতি ভাষার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ
৪.১   ভূমিকা

ধ্বনি থেকে বর্ণ, বর্ণ থেকে শব্দ, এবং শব্দের সঙ্গে শব্দ মিলে তৈরি হয় বাক্য। এই বাক্য দিয়েই আমাদের ভাব বিনিময়, আমাদের প্রশ্ন, কিংবা উত্তর, আদেশ কিংবা উক্তি, সমর্থন কিংবা প্রতিবাদ। বাক্যেই আমাদের ভালবাসা, ঘৃণা, সহমর্মিতা, উষ্মা প্রকাশ। এই বাক্য আবার গড়ে ওঠে একটা নির্দিষ্ট ধারায়, এর নিজস্ব ধারায় সৃষ্টি হয়ে যায় একটা প্রণালী। প্রত্যেকটি ভাষারই নিজস্ব একটা বাক্যগঠন রীতি তৈরি হয়ে যায়। একটি বাক্যে সব কটি শব্দ বাংলা হলেও দেখা যাবে গঠনগত দিক বিচার করলে বাক্যটি (Syntactically) বাংলা হয়ে ওঠেনি। যেমন এ বাক্য- ‘আসামে চিনিকল থাকা একটি স্থানের নাম লিখ’, কিংবা ‘সে তাহার বাবাকে মান দেয়’। এতে সবক’টি শব্দই বাংলা কিন্তু তৎসত্ত্বেও গঠনগতভাবে এ বাক্যদুটোই শুদ্ধ বাংলা নয়।

বাংলা বাক্যের সংগঠন সূত্র মূলত সংস্কৃত ব্যাকরণের ধারা মতেই নিরূপিত হয়েছে, এতে আবার ইংরেজি ব্যাকরণের অভিঘাতও এসে যোগ হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে একটি নিজস্ব চরিত্রলক্ষণ নিয়ে বাংলা ভাষার আত্মপ্রকাশ, যা পরিস্ফুট হয় আমাদের মুখের ভাষায়, অর্থাৎ বাক্যে।

পরবর্তী পর্বগুলোতে এ দিকগুলোই আলোচিত হবে।

৪.২   বাক্য কী

বাক্য কী?

এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়, অথচ মনে হয় সহজই তো বটে। কয়েকটি শব্দের সমষ্টি বলে একটি সংজ্ঞা খাড়া করলে, প্রশ্ন জাগবে ‘যেমন-খুশি কিছু শব্দ হলেই তা বাক্য হয়ে উঠবে?’ না, তা নয়। পাশাপাশি বিন্যস্ত কয়েকটি শব্দ (পদ) যদি একটি সম্পূর্ণ অর্থ বা মনোভাব প্রকাশ করতে পারে, তবেই তাকে বলা যাবে বাক্য।

এ বাক্য একটি মাত্র শব্দ (পদ) দিয়েই হতে পারে। যেমন: ‘এসেছে’, দু’টো দিয়ে, তিনটে, চারটে, পাঁচটা, ছ’টা দিয়েও হতে পারে। শুধু দেখতে হবে সম্পূর্ণ মনোভাব এতে প্রকাশ হয়েছে কি না।

এ সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করার সঙ্গে আরও একটি জিনিস লক্ষণীয়। পদবিন্যাস যথাযথ হলেও, বাক্যটিতে অর্থসঙ্গতি আছে কি না, তা’ও বিবেচ্য। অন্ধকার রাতে পথ চিনে আসা হয়তো কোনো ক্রমে সম্ভব, কিন্তু ‘গভীর অন্ধকারে পথ দেখে বাড়ি পৌঁছলাম’ বললে শব্দগুলোর মধ্যে অর্থগত সম্পর্ক স্থাপিত হবে না। বাক্য হিসেবে এটা দাঁড়াবে না।

প্রথাগত ব্যাকরণে বলা হয় বাক্যের দু'টি উপাদান: উদ্দেশ্য এবং বিধেয়।

যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় সে হল উদ্দেশ্য। যেমন, ‘প্রদীপ্ত কলেজে যাচ্ছে’- এখানে প্রদীপ্ত হ’ল উদ্দেশ্য, আর ‘কলেজে যাচ্ছে’ হল বিধেয়।

এই উদ্দেশ্য সাধারণত বাক্যের প্রথম অংশ অধিকার করে বসে, তবে এটা শেষেও আসতে পারে।

একটি বাক্যগঠনে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ :
যোগ্যতা :
গভীর অন্ধকারে পথ ‘দেখে’ চলা যে অবাস্তব। তাই ‘গভীর অন্ধকারে পথ দেখে বাড়ি পৌঁছেছি’- এটা বাক্য হিসেবে গ্রাহ্য নয়। অসঙ্গত, অসংলগ্ন পদসমষ্টি তো বাক্য হতে পারে না।
আকাঙ্ক্ষা :
‘ওরা সেদিন অন্ধকারে পথ হারিয়ে’- এই যদি বাক্যের কাঠামোটা হয় তবে শ্রোতার সামনে তো বিপন্ন-বিস্ময়। পথ হারিয়ে কী করেছে, কোথায় গেল, বিপদে পড়ল এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তরের আকাঙ্ক্ষা মনে জাগবে, অথচ এর নিবৃত্তি নেই। বাক্যটির সমাপ্তিচিহ্ন কী হবে, দাঁড়ি না কমা?
আসক্তি :
এ আসক্তি ইংরেজি addiction নয়, ব্যাকরণের বিশেষ পরিভাষা। এর অর্থ হল শৃঙ্খলা। শব্দ বা পদগুলো যথাযোগ্য স্থানে বসলে তবেই বাক্য সংগঠিত হবে। ‘উড়তে নীল ঘুড়ি আকাশে যায় দেখা’- এখানে পদসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কজনিত নৈকট্য নেই। পুনর্বিন্যাস করে ‘নীল আকাশে ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়’ বানিয়ে নিলে তবে অর্থ স্পষ্ট হল।
৪.৩   বাক্যের শ্রেণীভেদ
গঠনগত দিকে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় : -
সরল বাক্য : (Simple Sentence)
একটি মাত্র উদ্দেশ্য ও একটি মাত্র বিধেয় নিয়ে সরল বাক্যের সংগঠন। ‘সে সকালে এসেছে’, ‘আমি কাল আসব না’- এরকম ছোট বাক্য ছাড়াও ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম আশ্চর্যজনকভাবে মেঘালয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন।’ বাক্যটি দীর্ঘ। কিন্তু এখানে একজন মাত্র উদ্দেশ্য, এবং একটি মাত্র বিধেয়, ‘মেঘালয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন’।
যৌগিক বাক্য : (Compound)
দুই বা দুইয়ের অধিক স্বাধীন বাক্য সংযোজক বা যোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে যখন একটি দীর্ঘ বাক্য গঠন করে তখন তাকে বলে যৌগিক বাক্য। যেমন- ‘সে ভাল ছেলে কিন্তু তার সঙ্গীরা দুর্বৃত্ত’। অথবা ‘সে সৎ কিন্তু যে বন্ধুটি তার সঙ্গে এসেছিল সে অসৎ’।
জটিল বাক্য : (Complex)
দুই বা ততোধিক বাক্য মিলে যদি এরকম একটি বাক্য হয় যে এতে অন্য বাক্য বা বাক্যগুলো একটি স্বনির্ভর প্রধান বাক্যের অঙ্গ বা অধীন হয়, তাহলে তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমন- ‘আমি জানি যে তুমি আসবে’- বাক্যে ‘যে তুমি আসবে’ অংশটি প্রথম অংশের অধীন। তেমনি, ‘যদি বৃষ্টি হয়, আমি আসব না’, এখানে প্রথম বাক্যটি, ‘যদি বৃষ্টি হয়’, দ্বিতীয় বাক্যের অধীন।
৪.৪   বাক্যের অর্থগত বিভাগ
অর্থের প্রকৃতি অনুসারে বাক্যকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়।
এগুলো নিম্নরূপ : -
বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক: (Narrative/Assertive)
কোনও ঘটনার ভাব বা বিবৃতি থাকলে তাকে বলে বর্ণনাত্মক, নির্দেশাত্মক বা ঘটনাত্মক বাক্য। যেমন, ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে’, ‘সে যে তোমাকে ভুল পথে চালিয়েছিল তা ভুলে যেও না’। প্রথম বাক্যটি তো সরাসরি একটা বক্তব্যকে assert করছে। দ্বিতীয় বাক্যটিকে অনুজ্ঞাসূচক (Imperative) ভাবলে ভুল হবে, এখানে ‘আদেশ’ বা ‘অনুরোধ’ নয়, একটি কথাকে assert করা হয়েছে।
প্রশ্নবোধক বাক্য: (Interrogative)
যে বাক্যে কোনও ঘটনা, ভাব বা অবস্থা সম্বন্ধে কিছু জানবার ইচ্ছা প্রকাশ পায়, তা’ই প্রশ্নবোধক বাক্য। যেমন : -
  • — আজ কী বার?
  • — আপনি কোথায় যাবেন?
  • — তুমি কে?
অনুজ্ঞা-বাক্য: (Imperative Sentence)
ইংরেজি শব্দটি নিয়ে একটু কথা বলা যাক্। শব্দের মূলে রয়েছে ‘emperor’, মানে সম্রাট। সম্রাটের অনেক কাজের মধ্যে একটা কাজ হ’ল ‘আদেশ করা’ যেমন- ‘ফাঁসিতে চড়াও’, ‘আক্রমণ কর’ ইত্যাদি। তবে সম্রাটের মুখ থেকে এরকম বাক্যও বেরোতো, ‘আসতে আজ্ঞা হোক্, বসতে আজ্ঞা হোক’ ইত্যাদি। এ থেকেই এল Imperative Sentence-এর ধারণা। বাংলায় আজ্ঞা, উপদেশ, অনুরোধ, নিষেধ জানাতে যে বাক্য ব্যবহার হয় তার নাম ‘অনুজ্ঞাসূচক’ বাক্য।
আবেগসূচক বাক্য: (Interjective)
এটাকে আবার উচ্ছ্বাসাত্মক, বিস্ময়সূচক বাক্যও বলা হয়। এ বাক্যে আনন্দ, বিরক্তি, ভয়, দুঃখ, ধিক্কার, আমেজ এসবের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়। এবং বাক্যের শেষে সাধারণত note of interjection অর্থাৎ আশ্চর্যবোধক চিহ্ন (!) বসানো হয়। যেমন : -
  • — আঃ কী আরাম, এসো দুখিরাম!
  • — হায় ভগবান! কী হ’ল!
  • — উরে ব্বাস! আমি পারব না!
  • — ছি! কী বাজে কথা বলছ!
তাছাড়া রয়েছে-
ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য : ‘তোমার মঙ্গল হোক্।’
কার্যকারণাত্মক বাক্য : ‘যদি অনুমতি পাই, আসব।’
সন্দেহসূচক বাক্য : ‘আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে।’
৪.৫   বাচ্য

যে-রূপভেদের দ্বারা ক্রিয়া প্রধানত কা’কে অবলম্বন করে কাজ করছে তা বোঝা যায় তাকেই বলে বাচ্য। ইংরেজি বাচ্যকে বলে Voice । এর এক সংজ্ঞা এরকম, ‘Voice is the quality of a verb that indicates whether its subject acts (active voice) or is acted upon (Passive voice)’।

বাংলায় বাচ্য তিন প্রকারের : -

কর্তৃবাচ্য :  যে ক্রিয়াদ্বারা কর্তা প্রধান রূপে বাচ্য হয় তা'ই কর্তৃবাচ্য (Active voice)। যেমন : - ‘আমি গান গাইছি’, ‘তুমি কথা বলছ’, ‘সে অঙ্ক কষছে’।

কর্মবাচ্য : যে ক্রিয়াদ্বারা কর্ম প্রধানরূপে বাচ্য হয়। তা'ই কর্মবাচ্য (Passive voice)। যেমন : - ‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে’, ‘ওসব আমার দেখা আছে’, ‘বইটি পড়া হয়ে গেছে’।

ভাববাচ্য : যেখানে ক্রিয়ার অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তা'ই ভাববাচ্য। এতে কর্তা বা কর্মের প্রাধান্য না বুঝিয়ে ক্রিয়ার প্রাধান্য বোঝায়। যেমন : - ‘আমার যাওয়া হচ্ছে’, ‘আমার রাত্রে ঘুম হয়নি’, ‘মহাশয়ের কী করা হয়?’

বাংলা ভাষায় এক শ্রেণীর বাচ্যকে অন্যশ্রেণীর বাচ্যে রূপান্তরিত করার প্রথা রয়েছে (এটা অবশ্য অন্যভাষায়ও আছে। ইংরেজিতে Voice change তো ব্যাকরণ অনুশীলনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়)। কর্তৃবাচ্যকে কর্মবাচ্যে, ভাববাচ্যকে কর্তৃবাচ্যে, কর্ম-কর্তৃবাচ্যকে কর্তৃবাচ্যে ইত্যাদি নানাভাবে রূপান্তরিত করা যায়।
এখানে কয়েকটি অনুশীলনী দেওয়া হল : -

কর্তৃবাচ্যকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন :

তাকে অধ্যক্ষ বহিষ্কার করেছেন।  সে অধ্যক্ষ কর্তৃক বহিষ্কৃত হয়েছে।
অঙ্কটি বুঝতে পারলাম না।  অঙ্কটি বোঝা গেল না।
আজ কী মাছ কিনেছ?  আজ কী মাছ কেনা হল?

কর্তৃবাচ্যকে ভাববাচ্যে পরিবর্তন :

সে কোথা থেকে এল?   কোথা থেকে তার আসা হল?
সকালে আমি পড়তে বসিনি?  সকালে আমার পড়া হয়নি।
কোথায় যাচ্ছ?  কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

কর্মবাচ্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন :

তাকে উপহারটি দেওয়া হোক্‌।  তাকে উপহারটি দিন।
তিনটি দিন আমার পড়া হয়নি।  আমি তিনটি দিন পড়িনি।
এশিয়ার দু'টো দেশের জাতীয়সংগীত রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক রচিত।
  রবীন্দ্রনাথ এশিয়ার দু’টো দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন।

ভাববাচ্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন :

আপনার এখানে কী কাজ করা হয়?   আপনি এখানে কী কাজ করেন?
এ কাজটি শেষে আমাকেই করতে হল।  আমিই শেষে এ কাজটি করলাম।
রাত বারোটায় শেষ দলের খেতে বসা হল।  রাত বারোটায় শেষ দল খেতে বসল।

কর্মকর্তৃবাচ্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন :

গ্লাসটি ভেঙে গেছে।  গ্লাসটি ভেঙে ফেলেছি।
অনেক দেরিতে ক্লাস শেষ হল।  (তিনি) অনেক দেরিতে ক্লাস শেষ করলেন।
মোবাইলটি হারিয়ে গেছে।  মোবাইলটি হারিয়ে ফেলেছি।

৪.৬   বাংলা বাগ্‌বিধি

ইংরেজিতে দুটো শব্দ আছে ‘Phrase’ (শব্দগুচ্ছ) ‘আর’ Idiom (প্রবাদ)। বাংলায় প্রচলিত আছে ‘প্রবাদ’ ও ‘প্রবচন’। ‘আপ্তবাক্য’ শব্দটিও শোনা যায় যখন একটি বাক্য বহু ব্যবহারে প্রায় জীর্ণ হয়ে যায়। ইংরেজিতে একে বলে ‘Cliché’ (ক্লিশে)। আমরা যাকে বাগবিধি বা প্রবাদ-প্রবচন বলি, মোটামুটি ইংরেজি Idiom দিয়েই তা বোঝানো হয়। বর্তমান পাঠে আমরা বাগবিধিই বলব, তা সেটা শব্দগুচ্ছই হোক্ আর প্রবাদ-প্রবচন বা বিশিষ্টার্থক বাক্‌গুচ্ছই হোক্ না কেন।

বাঙালির মুখের ভাষায় এ বাগবিধির ছড়াছড়ি অজস্র। মান্য চলিত বাংলা ছাড়াও প্রতিটি আঞ্চলিক উপভাষায় এর উদাহরণ প্রচুর। আর সিলেট-কাছাড়, অর্থাৎ বরাক উপত্যকায় যুৎসই একটি বাক্যের প্রাণভ্রমরাই বুঝি এ বাগবিধি। মুখের ভাষা থেকে এ বাগবিধি লিখিত ভাষায়, মুদ্রণ মাধ্যমে এবং শ্রুতিমাধ্যমেও নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে। সংবাদপত্রে অর্থনৈতিক দুর্নীতির খবরের শিরোনাম হয় ‘রক্ষকই ভক্ষক’ ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’, রাজনৈতিক নেতাদের দলবদলের শিরোনাম ‘আয়ারাম গয়ারাম’, দ্বিচারিতা বোঝাতে ‘কনের পিসি বরের মাসি’- এসবের জুড়ি নেই।

এই বাকরীতি উঠে এসেছে কখনও একেবারে প্রাত্যহিক, সাধারণ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে, গ্রামীণ কথোপকথন থেকে, আবার কখনও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার থেকেও সংস্কৃত এবং বাংলা শব্দের মিশ্রণে। তবে সম্প্রতি হিন্দি বা আরবি-ফারসি শব্দের সঙ্গে বাংলা ক্রিয়াপদ জুড়ে যেমন বাকরীতি গড়ে উঠছে তেমনি ইংরেজি বা ইউরোপীয় শব্দের সঙ্গে বাংলা মিলেও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাংলা ইডিয়ম। প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণ থেকে বাংলা বাগবিধির তালিকা এবং উদাহরণগুলোর দিকে চোখ বুলালেই বোঝা যাবে বাংলা বাগন্ধারার সম্ভার যে কত বিচিত্র, কৌতূহল-উদ্দীপক এবং ব্যঞ্জনাময়।

ব্যাকরণের পরিভাষায় এ বাগধারায় রয়েছে বিশেষ্যপদের বিশিষ্ট প্রয়োগ যেমন ‘মাথা’ থেকে মাথা ধরা, মাথা খাওয়া, মাথা কেনা ইত্যাদি; বিশেষণ পদের বিশিষ্ট প্রয়োগ যেমন, কাঁচা থেকে ‘কাঁচা কাজ’, ‘কাঁচা ঘুম’, ‘কাঁচা পয়সা’, আর ক্রিয়াপদের বিশিষ্ট প্রয়োগ, যেমন- ‘ওঠা’ থেকে ‘বাজার উঠে যাওয়া’, ‘মিটিঙে বিষয়টি ওঠানো’, ‘হঠাৎ বলে ওঠা’, ইত্যাদি।

আমরা কয়েকটি লোকায়ত, কয়েকটি সংস্কৃতজাত, আর কয়েকটি বিদেশি সূত্রজাত উদাহরণ এখানে হাজির করব মাত্র :

কয়েকটি লোকায়ত বাগ‌্‌বিধি :

•  আকথা কুকথা   –এর অর্থ   বাজে কথা
•  উল্টো চন্ডী   –এর অর্থ     বিরুদ্ধে চলা ব্যক্তি
•  একাদশে বৃহস্পতি   –এর অর্থ     সৌভাগ্যের কথা
•  কাঁটা দিয়ে কাঁটা   –এর অর্থ     শত্রু দিয়ে শত্রু দমন
•  কাকভূষন্ডী   –এর অর্থ     দীর্ঘজীবী
•  ঘর ভাঙানো   –এর অর্থ     বিবাদ লাগানো
•  কলুর বলদ   –এর অর্থ     অকর্মা
•  খাল কেটে কুমির আনা   –এর অর্থ     শত্রুকে পথ দেখানো
•  রথ দেখা কলা বেচা   –এর অর্থ     এক সঙ্গে দুই উদ্দেশ্য
•  শকুনি মামা   –এর অর্থ     কুচক্রী
•  সবে ধন নীলমণি   –এর অর্থ     একমাত্র সন্তান
•  হাড় জ্বালানো   –এর অর্থ     অত্যন্ত জ্বালাতন করা

এবারে দেখা যাক কয়েকটি সংস্কৃত শব্দ দিয়ে তৈরি বাগ‌্‌বিধির নমুনা :

•  অন্নচিন্তা চমৎকারা •  অধিকন্তু ন দোষায়
•  অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী •  কিমাশ্চর্যম্ অতঃপরম্
•  প্রহারেণ ধনঞ্জয় •  বহারম্ভে লঘুক্রিয়া
•  মধুরেণ সমাপয়েৎ •  মা ফলেবু কদাচন
•  মৌনং সম্মতিলক্ষণম্ •  য পলায়তি স জীবত
•  যেন তেন প্রকারেণ •  শঠে শাঠ্যাং সমাচরেৎ
•  শতং বদ মা লিখ   

আমরা প্রতিদিনই মুখে এবং লিখিত ভাষায় ব্যবহার করি, তা'কি আর খেয়াল রাখি? অলমতি বিস্তারেণ। (অর্থ : "অধিক লেখার আর প্রয়োজন নেই" বা "বাহুল্যে প্রয়োজন নেই")

আরবি-ফারসির শব্দ মিলে, সঙ্গে বাংলাও নিয়ে রয়েছে অনেক বাগ‌্‌বিধি :

•  আক্কেল সেলামি •  এলাহি কান্ড
•  খয়ের খাঁ •  গদাই লশকরি
•  বিসমিল্লায় গলদ •  মগের মুল্লুক
•  নরক গুলজার   

এ ছাড়াও আমাদের প্রাত্যহিক কথাবার্তায় রয়েছে ইংরেজি, কিংবা ইংরেজি-বাংলা বা হিন্দি মিশে তৈরি হওয়া বাগবিধি। সঙ্গে আছে ইংরেজির সরাসরি বাংলা অনুবাদ করে (বঙ্গীকরণ) তৈরি নতুন বাগবিধি। যেমন : -

•  চাকরি নট হওয়া •  শো কজ করা
•  টেনশন নেওয়া •  অপারেশন
•  মাল ডেলিভারি দেওয়া •  পারমিট নেওয়া
•  স্ট্রাইক ডাকা •  মাত্রা দেওয়া
•  বক্তব্য রাখা   
৪.৭   সাধু ভাষা, চলতি ভাষা

বাংলা গদ্য ভাষারীতির আত্মপ্রকাশ মোটামুটি অষ্টাদশ শতকেই। কিছু রাজকীয় আদেশপত্র, চিঠিপত্র, দলিল দস্তাবেজে প্রথম এ রীতির আত্মপ্রকাশ এবং এরপর তা আসে সৃজনশীল রচনাকর্মে – নিবন্ধ, প্রবন্ধ, গল্প, নাটকে। বাংলার মধ্যযুগে আঞ্চলিক ভাষার কাঠামোর উপর রাঢ়ী, বারেন্দ্র ও বঙ্গালি উপভাষার মিশ্রণে আত্মপ্রকাশ করল গদ্য ভাষা, যার নাম হল সাধু ভাষা। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে কেন্দ্র করে যে গদ্য ভাষাটি তৈরি হল তা'ই সাধু গদ্য সংস্কৃত ভাষার প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি। বলা বাহুল্য বাংলা ভাষার এ লেখ্য রূপটি কৃত্রিম, এবং মৌখিক ভাষার সঙ্গে তার ব্যবধানও বিস্তর। কথাগুলো মনে রাখা প্রয়োজন, বিদেশি মিশনারি-পন্ডিত উইলিয়াম কেরি, হ্যালহেড, ডানকান এবং দেশীয় পন্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রাজা রামমোহন রায় আর পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই বাংলা সাধু গদ্যের উদ্ভব এবং বিকাশ।

“ বাঙ্গলা সাধুভাষা ধীরে ধীরে গড়িয়া উঠিয়াছে, ইহা এখনকার ‘পশ্চিমবঙ্গ’ ও ‘বাংলাদেশ’ নিবাসী দশকোটির উপর সমগ্র বঙ্গ-ভাষী জনগণের মাতৃভাষা, বিভিন্ন কথ্য ভাষা, বেশ জোরের সঙ্গে বিদ্যমান থাকিলেও সেগুলিকে এক সাধারণ ভাষার গন্ডীর মধ্যে সাধু ভাষার সূত্রে গাঁথিয়া রাখিয়াছে। এই যোগসূত্রকে ছিন্ন করিয়া দিলে, ভাষার রাজ্যে ঐক্যবোধ নষ্ট হইয়া যাইবে। বহুপূর্বে এই ভাবে ঢাকার বাঙ্গালা ও কলিকাতার বাঙ্গলাকে পৃথক করিয়া বাংলাভাষী জাতির মৌলিক ঐক্য ধ্বংস করিয়া দিবার চেষ্টা হইয়াছিল লর্ড কার্জনের আয়োজিত Partition of Bengal বা বঙ্গভঙ্গের দ্বারায়। ”

ক্রমে এ সাধু গদ্য রীতির মধ্যে তৎসম শব্দের পাশাপাশি তদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দের স্থান লাভ, সংস্কৃত ক্রিয়াপদ, সর্বনামের স্থলে বাংলা ক্রিয়াপদ, সর্বনামের প্রয়োগ, নতুন বিরতি চিহ্নের ব্যবহার এবং কেতাবি ভাষার স্থলে মৌখিক ভাষার ব্যবহার বাংলা গদ্যকে ভিন্নপথে টেনে আনল, সৃষ্টি হল চলতি গদ্য। এ ইতিহাস অনুশীলন নয়, আমরা এ পর্বে সাধু ও চলতি গদ্যরীতির চরিত্রলক্ষণে আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখব।

সাধু ভাষা :

ঊনবিংশ শতাব্দীতে সৃষ্ট বাংলা গদ্যের একটি পরিশীলিত (সাধু অর্থাৎ chaste) রূপই হ’ল সাধু ভাষা। এতে সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বেশি। সংস্কৃত তৎসম এবং বাংলা তত্ত্বব শব্দের প্রয়োগ ছাড়াও ব্যাকরণগত আরও কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়েই এ ভাষার আত্মপ্রকাশ ঘটে। জ্যোতিভূষণ চাকীর মতে ‘সাধুভাষা নামটি সম্ভবত রামমোহনই দিয়েছিলেন। এই ভাষাকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর তিনিই স্থাপন করলেন। বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের হাতে সে-ভাষা প্রাণ পেল।’

সাধু ভাষার গঠনগত রূপটি বুঝতে হলে চলতি ভাষার সঙ্গে এর পার্থক্যটি দেখতে হয়। তবে এ কাজে যাবার আগে বরং চলতি ভাষাটা কী, এদিকেই একটু দৃষ্টিপাত করে নেওয়া যাক্।

চলতি ভাষা বা চলিত ভাষা :

আধুনিক কালে বাংলা গদ্যে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত মৌখিক ভাষাই প্রাধান্য লাভ করছে। অর্থাৎ গদ্যভাষা এসে গেছে আমাদের কথ্যভাষার কাছাকাছি। এতে সংস্কৃত ভাষার প্রভাব কম, তৎসম শব্দের প্রয়োগও কম, এবং সে সঙ্গে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার (শুনিতেছে, শুনিল), সর্বনাম (তাঁহারা) ও অনুসর্গের (ইহা) রূপ পূর্ণাঙ্গের পরিবর্তে হয়েছে সংক্ষিপ্ত। যেমন, শুনছে, শোনে, তাঁরা, এ ইত্যাদি।

তাছাড়াও কিছু অব্যয় ও ক্রিয়াবিশেষণের প্রয়োগেও ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন : -

•  এক্ষণে      এখন;
•  পশ্চাতে      পেছনে;
•  তথাপি      তবু;
•  পুনর্বার      আবার ইত্যাদি।

সে সঙ্গে,

•  সন্ধ্যা   হয়েছে   সন্ধ্যে;
•  পূজা   হয়েছে   পুজো;
•  জিজ্ঞাসা   হয়েছে   জিগগেস ইত্যাদি।

সাধু ভাষার কিছু উদাহরণ : -

  • ‘পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ?’
  • ‘কোথা হইতে তুমি আসিয়াছ নদী?’
  • ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।’
  • ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।’

চলিত ভাষার উদাহরণ : -

  • ‘ইস্কুলে যে বাঙলা ব্যাকরণ পড়ানো হয় সে ব্যাপারটা একটা দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্নের হাত থেকে বাঁচবার একটাই উপায় আছে। সে হল জেগে ওঠা।’  — প্রবাল দাশগুপ্ত
  • ‘বাঙাল ভাষা মিষ্ট এবং তার এমন সব গুণ আছে যার পুরো ফায়দা এখনও কোন লেখক ওঠান নি। পূব-বাংলার লেখকরা ভাবেন, ‘করে’ শব্দকে ‘কইরা’ এবং অন্যান্য ক্রিয়াকে সম্প্রসারিত করলেই বুঝি বাঙাল ভাষার প্রতি সুবিচার করা হয়ে গেল। বাঙাল ভাষার আসল জোর তার নিজস্ব বাক্যভঙ্গীতে বা ইডিয়ামে।’  — সৈয়দ মুজতবা আলী

“বিগত শতকের ছয়ের দশকে, শুদ্ধ সাধু-ভাষায় মহাভারতের অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহ, কলকাতার বিশুদ্ধ অবিমিশ্র চলিত ভাষায় বাংলা সাহিত্যের একখানি Classic বা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ লিখিলেন- ‘হুতোম পেঁচার নকশা’। সাধু-ভাষা ও চলিত-ভাষার মিলন, বা ঐক্য স্থাপিত করিতে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দান অপরিসীম। স্বামী বিবেকানন্দ ও চলিত-ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। রবীন্দ্রনাথ ভাষা বিষয়ে ছিলেন সব্যসাচী। পরিণত বয়সে লেখা তাঁহার ‘জীবনস্মৃতি’ বিশুদ্ধ সাধু-ভাষায়, কিন্তু যৌবনের রচনা, ‘যুরোপ’ প্রবাসীর পত্র’ চলিত ভাষায় _ _ _”

বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজেন্দ্র মিত্র এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন সাধু গদ্য ভাষাকে শ্রীমণ্ডিত করেন, এর প্রকাশ সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করেন, ঠিক ওই সময়ই প্যারীচাঁদ মিত্র এবং এর কিছু পরও কালীপ্রসন্ন সিংহ গদ্যভাষার জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন ‘আলালের ঘরের দুলাল’ এবং ‘হুতোম পেঁচার নকশা’ মৌলিক বাক্রীতি, দেশজ শব্দ, বিদেশি শব্দ, বাকভঙ্গির প্রয়োগ বাঙালি পাঠকদের যে চমকিত করেছে এ চমক আজও রয়ে গেছে। তবে ‘আলালী’ বা ‘হুতোমী’ ভাষা তৎকালীন বিদ্বজ্জনের অকুণ্ঠ সমর্থন যে লাভ করেছে তা বলা চলে না; বঙ্কিমচন্দ্র এ ভাষাকে প্রশংসা করলেও গ্রহণ করেননি।

চলতি ভাষার পক্ষে তাত্ত্বিক সমর্থন যুগিয়েছেন ১৮৭৭ সালে শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায় একটি ইংরেজি নিবন্ধে, Bengali, Spoken and Written এ। তাঁর অভিমত ছিল কৃত্রিম ভাষায় রচিত সাহিত্য প্রাণবন্ত হয় না। সাধুভাষা তো আসলে একটি কৃত্রিম, পরিশীলিত, শিষ্ট ভাষা, মানুষের মুখের ভাষা থেকে যার অবস্থান একটু দূরে। বিংশ শতকের প্রথম দিকেই প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্র’ বাংলা ভাষায় এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করে। এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত এর প্রভাবে চলতি গদ্য লিখতে শুরু করেন। বিগত সত্তর আশি বছরে চলতি ভাষা সৃজনশীল সাহিত্য, প্রবন্ধ নিবন্ধের জগতে বিস্তর প্রভাব বিস্তার করেছে। সংবাদপত্র, লিটল ম্যাগাজিন, সাময়িক পত্রিকায়ও সাধুভাষার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে চলতি ভাষা। এখন পাঠ্যপুস্তক, স্কুল কলেজের উত্তরপত্র, শিক্ষকদের নোট এতেও চলতি ভাষার হয় জয়জয়কার।

আকাশবাণী এবং দূরদর্শনে তো চলতিভাষার প্রচলন একেবারে শুরু থেকেই। বর্তমানে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সমস্ত চ্যানেলে ওই চলতি ভাষা স্বাভাবিক ভাবেই সাধু ভাষার স্থান এখানে না থাকারই কথা। এ মুহূর্তে সাধুভাষা বাংলার অন্যতম মুদ্রণ মাধ্যম ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকার সম্পাদকীয় কলমের সংকীর্ণ পরিসরেই নিজের অবস্থানটুকু টিকিয়ে রেখেছে।

অনুশীলনী
(ক)
  • বাকবিধি বা বাগবিধি বলতে কী বোঝায়?
  • বাগবিধির কার্যকারিতা কী?
  • বাগবিধিকে কী কী ভাবে বিভাজিত করা যায়?
  • কোনও একটি ব্যাকরণ বই থেকে ১০ টি বিশেষ্যপদের বিশিষ্ট প্রয়োগ বের করে নিজ ভাষায় উদাহরণস্বরূপ বাক্য রচনা করুন।
  • বিশেষ্য পদ্যের বিশিষ্ট প্রয়োগের ৫টি উদাহরণ দিয়ে বাক্য রচনা করুন।
  • ৫টি ক্রিয়াপদের বিশিষ্ট প্রয়োগের উদাহরণ ও বাক্য রচনা করুন: (এ বইয়ের শব্দগুলো বাদ দিয়ে)
  • বাংলা সংবাদপত্র খুঁজে অন্তত একটি ‘হেড লাইনে’ বাগবিধির উদাহরণ বের করে লিখুন।
  • সংস্কৃত সূত্রে তৈরি ২টি বাগবিধির উদাহরণ (এ বইতে উল্লেখ নেই এমন) বাক্য রচনা সহ দিন।
(খ)
  • সাধু ভাষারীতিটি কাদের প্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে?
  • সাধু ভাষার প্রধান চরিত্রলক্ষণগুলো কী?
  • সাধু ভাষায় প্রথম পর্বের গদ্যকারদের নাম করুন।
  • সাধু ভাষাকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করেন যে দু'জন বাঙালি মনীষী তাদের নাম কী?
  • চলিত ভাষার প্রধান চরিত্রলক্ষণ কী?
  • বাংলায় চলিত ভাষার পক্ষে প্রথম তাত্ত্বিক যুক্তি খাড়া করেন কে?
  • চলিত ভাষার প্রথম প্রচলনে প্রমথ চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে কিছু লিখুন।
  • রবীন্দ্রনাথ কবে থেকে চলিত ভাষার লিখতে শুরু করেন?
  • বর্তমানে সাধু ভাষার অবস্থানটি কী?
  • সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় এখন কোন ভাষার লেখা হয়?
(গ)
চলতি থেকে সাধু রীতিতে রূপান্তরিত করুন : –
  • মদীয় পিতৃদেব
  • তদীয় শ্বশ্রুমাতা
  • এই নিমিত্ত তোমাদিগের
  • যদ্যপি
(ঘ)
নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদটি চলিত ভাষায় রূপান্তরিত করুন : –
শ্রীহট্টের ভূতত্ত্ব বিচার করিলে প্রতীয়মান হইবে যে শ্রীহট্ট অতি প্রাচীন দেশ। শ্রীহট্টের উত্তর দিগ্বর্ত্তী অভ্রভেদী পর্বতমালা কতযুগ যুগান্তর হইতে এদেশের মেরুদন্ডরূপে দন্ডায়মান, তাহা কে বলিবে? বরবক্র ও সুরমা এ জিলার প্রধান নদী; মনু, ক্ষমা প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত ক্ষীণাঙ্গিনী স্রোতস্বতী বরবক্রে আত্মসমর্পণ করিয়াছে। শেষোক্ত নদীত্রয় পুণ্যসলিলা নদী বলিয়া শাস্ত্রে কীৰ্ত্তিত হইয়াছে। মনু নদী সম্বন্ধে তন্ত্রে লিখিত হইয়াছে যে সত্যযুগে ভগবান মনু এই নদীতীরে শিবপূজা করিয়াছিলেন বলিয়া ইহার নাম মনু নদী হইয়াছে। এবং বরবক্র নদ সর্ব্বপাপ প্রনাশক বলিয়া শাস্ত্রে কীর্ত্তিত।
— অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি, শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’, ১৯১২।
(ঙ)
নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদটি সাধুভাষায় রূপান্তরিত করুন : –
‘ভ্রাম্যমানের জল্পনা’ থেকেই দিলীপকুমারের বিশেষ রচনাবিভঙ্গ শুরু, ‘সবুজপত্র’-এর শিক্ষা বিফল হয়নি। চলিত ক্রিয়াপদ ব্যবহারযুক্ত বাক্যবন্ধনের রেওয়াজে অভ্যস্ত হতে অনেকের খানিকটা সময় লগতে পারে, কিন্তু দিলীপকুমারের নয়।
— অশোক মিত্র, ‘এ ধরায় দে বিদায়, অধরায় প্রাণ চায়’।
(চ)
নিম্নলিখিত পঙক্তিগুলোতে সাধু ক্রিয়াপদগুলো শনাক্ত করুন : –
  • গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে
    দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
  • হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে।
(ছ)
রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ বইটির কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়ে সাধু আর চলতির পার্থক্য লক্ষ করুন এবং পছন্দসই দুটো অংশের রূপান্তর করুন।
(জ)
বিবেকানন্দর ‘পরিব্রাজক’ গ্রন্থ থেকে একটি অনুচ্ছেদ বেছে নিয়ে এতে ক্রিয়াপদগুলোর তালিকা তৈরি করুন।
(জ)
গদ্যকার হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে সুনীতিকুমায়ের চট্টোপাধ্যায়ের কী অভিমত?

দ্বিতীয় পত্র
অধ্যায় - 
বাক্যতত্ত্ব