নীড়  দূর-শিক্ষাকেন্দ্র  পাঠ্যপুস্তক  দ্বিতীয় পত্র - অধ্যায়: দুই
বাংলা ভাষা ডিপ্লোমা পাঠক্রম
rotateআপনার মুঠোফোনটিকে ল্যান্ডস্কেপে রাখুন
প্রথম ষান্মাসিক - দ্বিতীয় পত্র
বাংলা ভাষা বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র   ❐   অধ্যায় -  দুই
বাংলা ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব
 
২.০   উদ্দেশ্য   

এ পর্বটিতে যা জানতে পারবেন —

  1. বাংলা ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্ব কী
  2. ধ্বনি ও বর্ণের পার্থক্য
  3. ধ্বনির শ্রেণী এবং ণত্ব-বিধি, ষত্ব-বিধি
  4. সন্ধির নিয়ম
২.১   ভূমিকা

প্রত্যেক ভাষারই একটি নিজস্ব ধ্বনিচরিত্র আছে। এ চরিত্রই ভাষাটিকে অন্য ভাষা থেকে আলাদা করে। বাংলায় একটি ধ্বনি শব্দের গোড়ায় বা শেষে বসবে কিনা তার নিয়ম যেমন আছে, তেমনি কোন্ ধ্বনির সঙ্গে কোন্ ধ্বনির সংযোগ হবে বা হবে না তারও নিয়ম আছে। ঙ, ড়, য় দিয়ে কোনও শব্দ শুরু হতে পারে না, দুটো মহাপ্রাণ ধ্বনির পাশাপাশি অবস্থান বা সংযুক্তি অসম্ভব- ইত্যাদি বাংলা ভাষার বিশেষ চরিত্রলক্ষণ।

বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ মিলে ৫০টি বর্ণ দিয়ে ধরা হয়েছে ধ্বনিসমূহকে। প্রতিটি শব্দের ভেতর রয়েছে অনেকগুলো বর্ণ। যেমন ‘কলিকাতা’। এর ভেতর রয়েছে ক+অ+ল+ই+ক+আ+ত+আ = মোট আটটি বর্ণ। এমনি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধ্বনিবিজ্ঞানের আলোকে এ অধ্যায়ে আলোচিত হবে।

এ অধ্যায়ে মূলত জ্যোতিভূষণ চাকী এবং সুভাষ ভট্টাচার্যের দুটো গ্রন্থে উল্লিখিত বিশেষ বিশেষ পর্বের সাহায্যে বাংলা ভাষার ধ্বনির লক্ষণ এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে অবহিত করা হবে।

২.২   বাংলা ধ্বনি

আমাদের কথা বলা কর্মটি সম্ভব হয় এ জন্যেই যে এ কর্মে আমাদের মুখ ও নাক দিয়ে হাওয়া বেরিয়ে আসে, যাকে আমরা বলি শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া। ঠিক যেমন বাঁশের নলের একপ্রান্ত থেকে ফুঁ দিয়ে হাওয়া ঢুকিয়ে বাঁশটির শরীরের নির্দিষ্ট সাতটি ফুটোতে আঙুল সঞ্চালন করে শেষ প্রান্ত দিয়ে বের করিয়ে এক একটি বিশেষ সুর উৎপন্ন করা হয়- তেমনি ফুসফুস থেকে কণ্ঠ, স্বরপল্লব, আলজিব, অধিজিহ্বা, তালু, দন্ত, ওষ্ঠ এবং নাসিকা দিয়ে নির্গত হাওয়ার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় ধ্বনি, যা হল শব্দের এক একটি একক এবং এ থেকে সৃষ্টি হয় শব্দ যা দিয়ে আমরা গঠন করি বাক্য।

কথা বলার সময় আমাদের ভেতর থেকে (যা অবশ্য আমরা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে নিয়ে জমা করি নিজেরাই) বেরিয়ে আসা হাওয়া নানা স্থানে বাধা পায়, আংশিক বাধা পেয়ে, পুরোপুরি বাধা পেয়ে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে, আবার কখনও বিনা বাধায় সরাসরি বেরিয়ে এসে একটি স্বর বা ধ্বনি ‘প্রডাকশন’ অর্থাৎ উৎপাদন করে। এ প্রক্রিয়ায় আমাদের মুখগহ্বরে কত কিছু ঘটে, (বুকের ভেতরে মাংসপেশিতেও) আমরা কি সব সময় সচেতন থাকি?

কথা বলার অন্যতম যন্ত্র জিহ্বা কখনও মুখের ভেতর ওপরে ওঠে, নিচে নামে, সামনে এগোয়, পিছিয়ে যায়, তালু স্পর্শ করে, দাঁত স্পর্শ করে, কখনও ঠোঁট দুটো একে অপরকে স্পর্শ করে, আবার ঠোঁটগুলো উন্মুক্ত হয়, বন্ধও হয়। আমাদের চোয়াল দুটোও ওঠানামা করে। এ সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে উৎসারিত ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে ভাষাবিজ্ঞানীরা আলাদা আলাদা ভাবে শনাক্ত করে আলাদা আলাদা নামকরণ করেছেন। আমরা পেয়েছি স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি, স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ আরও কত কী।

‘ধ্বনি আর বর্ণ এক জিনিস নয়। ধ্বনি মুখে উচ্চারিত হয়, তা কানে শোনার জিনিস। তা চোখে দেখা যায় না। আর বর্ণ হল ধ্বনির লিখিত রূপ।’

তবে এ নিয়ে আরো এগোবার আগে একটা সাবধানবাণী। আমরা যেন সচেতন থাকি ‘ধ্বনি’ আর ‘বর্ণ’ এক নয়, আলাদা জিনিস। ধ্বনি সঠিকভাবে কী- তা বুঝতে ইংরেজির সাহায্য নিই- ধ্বনি হল Sound, যা উচ্চারিত হলে কানে শোনা যায়। আর, বর্ণ হল একটি Symbol বা চিহ্ন- প্রতীক, যা কাগজের উপর লেখা হলে আমরা পড়তে পারি চোখ দিয়ে। অ, আ, ই, ঈ এগুলো সবই বর্ণ- যখন লিখিতভাবে উপস্থাপিত হয়। তো এগুলোকে চরিত্র বিশ্লেষণে স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি এবং স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে ভাষাবিজ্ঞানে।

২.৩   স্বরধ্বনি

প্রশ্ন : স্বরধ্বনি কী ?

উত্তর : যে ধ্বনি কন্ঠ ও মুখবিবর থেকে কোনও বাধা না পেয়ে, স্বচ্ছন্দে বেরিয়ে আসে তা'ই স্বরধ্বনি। এ উৎসারণে তাকে অন্য কোন ধ্বনির সাহায্য নিতেও হয় না। বাংলায় স্বরধ্বনির সংখ্যা সাত।
এরা হল-ই, উ, এ, ও, অ্যা, অ, আ।
লক্ষণীয়, এখানে ক্রমটি একটু অন্যভাবে সাজানো, আর এখানে ৯ [লি] নেই। একটা সময় দীর্ঘ ঋ এবং দীর্ঘ ৯ [লী] ও ছিল, এখন নেই। (এখন কম্পিউটার সফ্টওয়ারেও এ অক্ষরটি নেই)।
আর ঈ, উ তো আসলে কোনও আলাদা ধ্বনি নয়-ই+ ইঈ, উ+উ=উ। তবে বর্ণ হিসেবে এদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে আমরা আপাতত আছি ধ্বনিতে।
আমরা জানি স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিবের ভূমিকা প্রধান। এ জিবের ওঠা-নামার নিরিখে ধ্বনিগুলোর নামকরণ হয় নিম্নরূপ, (যেমনটি দেখিয়েছেন সুভাষ ভট্টাচার্য-)

ঊর্ধ্বমুখ স্বরধ্বনি ⚊ ই
ঊর্ধ্বপশ্চাৎ স্বরধ্বনি ⚊ উ
ঊর্ধ্বমধ্য সম্মুখ স্বরধ্বনি ⚊ এ
ঊর্ধ্বমধ্য পশ্চাৎ স্বরধ্বনি ⚊ ও
নিম্নমধ্য সম্মুখ স্বরধ্বনি ⚊ অ্যা
নিম্নমধ্য পশ্চাৎ স্বরধ্বনি ⚊ অ
নিম্নকেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি ⚊ আ

এখানে ‘অ্যা’ দেখে সংশয় জাগতে পারে। এই ‘অ্যা’ কোনও বর্ণ নয় ধ্বনি, তার স্থান আমাদের মুদ্রিত বইতে নেই, আছে মুখের উচ্চারণে। বেলা, খেলা, দেখাতে এই ‘অ্যা’ প্রকট। শুনুন রবীন্দ্রসংগীত, ‘আমার বেলা যে যায়’, কিংবা ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’, কিংবা ‘হেলা ফেলা সারাবেলা এ কি খেলা আপন মনে’। এখানে উল্লেখিত ‘বেলা’ আর ধ্বনিগত ‘ব্যালা’র পার্থক্য বুঝতে দুটো আধুনিক গানের পঙক্তি উদ্ধার করা প্রয়োজন- ‘বালুকা বেলায় কুড়াই ঝিনুক, ‘এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু।’ এই ‘বেলা’ নদীতীর হতে পারে, চরা জমি হতে পারে, তবে Time এর সমার্থক তো নয়।

ঠোঁটের উন্মুক্ততা (Openness) অনুযায়ী স্বরধ্বনির চারটি শ্রেণী : -

বিবৃত (Open) = আ
অর্ধবিবৃত (half-open) = অ, অ্যা
সম্ভূত (Close) = ই, উ,
(রবীন্দ্রগানে আছে ‘সমৃত দীর্ঘ শ্বাসে... আজি কোন সুরে বাঁধিব)
তাছাড়া এ এবং উ-এ দুটোকেও একটি শ্রেণীতে ফেলা যায়
অর্ধ-সম্ভূত (half close-vowel) স্বরধ্বনি।

জিবের গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনির আরও কয়েকটি বিভাগ রয়েছে : -
সম্মুখ স্বরধ্বনি (front) ই, এ, অ্যা
পশ্চাৎ স্বরধ্বনি (back) উ, ও, অ
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি (central) আ

স্বরধ্বনির আরও এরকম বিভাজন আছে- তা হল ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী : -
উ, অ, উচ্চারণে ঠোঁট হয় গোল (round),
ই, এ, অ্যা উচ্চারণে ঠোঁটে হয় প্রসারিত (Spread)।

তাছাড়াও বাংলায় রয়েছে নিহিত স্বর। ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে ‘কলিকাতা’, এবার দেখা যাক ‘কলম’- এতে রয়েছে ক্+অ++ও+ ম্। এখানে একটি ‘অ’ এবং 'ও' ধ্বনি রয়েছে, যা নিহিত, তাই এর নাম নিহিত স্বর (inherent vowel)।
তাছাড়াও রয়েছে অনুনাসিক স্বরধ্বনি, একক স্বর, যুক্তস্বর, অর্ধস্বর, দ্বিস্বরধ্বনি, এবং ত্রি-স্বর ও চতুঃস্বর।
২.৪   ব্যঞ্জনধ্বনি

প্রশ্ন : ব্যঞ্জনধ্বনি কী ?

উত্তর : আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি, স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ধ্বনি কন্ঠ ও মুখবিবর থেকে বিনা বাধায়, স্বাচ্ছন্দে বেরিয়ে আসে। কিন্তু ব্যঞ্জনধ্বনির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি এর বিপরীত। এখানে ফুসফুস থেকে বাতাসকে বেরিয়ে আসার সময় বেশ কিছু বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেই আসতে হয়, তাই এ নির্গত ধ্বনির নাম ব্যঞ্জনধ্বনি।

প্রচলিত ধারণা, ব্যাঞ্জনধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় না, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে, এ কথাটি আপাতত মনে রাখলেই যথেষ্ট।

বাংলা বর্ণমালায় পঁয়ত্রিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। কিন্তু ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ত্রিশ। অর্থাৎ পাঁচটি ব্যঞ্জনবর্ণের ধ্বনিগত মান অন্য কোনও বর্ণের সমান।

বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনির উচ্চারণ নিম্নরূপ : -


ক বর্গ -

ক খ গ ঘ ঙ উচ্চারণে জিবের মূল তালুর কোমল অংশ স্পর্শ করে। এগুলো কণ্ঠ্যবর্ণ। তবে উচ্চারণে বায়ু নাক দিয়ে বের হয়। এর নাম অনুনাসিক বর্ণ।


চ বর্গ -

চ ছ জ ঝ ঞ উচ্চারণে জিব মাঝের অংশ দিয়ে তালুর সামনের বা কঠিন অংশ স্পর্শ করে। এর নাম তালব্য বর্ণ। যেহেতু জিব আর তালুর স্পর্শে বায়ুর ঘর্ষণ হয়, তাই একে বলে ঘৃষ্টবর্ণ (affriction)। আর হল অনুনাসিক বর্ণ, এখানে বায়ু নাক দিয়ে বের হয়।

ট বর্গ -

ট বর্গ -

ট ঠ ড ঢ ণ  -এখানে জিবের ডগা উল্টে মূর্ধা আর তালুর কঠিন অংশ স্পর্শ করে। এর নাম মুমূর্ধন্য বর্ণও। এটাকে প্রতিবেষ্টিত ধ্বনিও (retroflex) বলে।


ড়, ঢ় -

ড় এবং ঢ়  -এখানে জিবের নীচের অংশ দিয়ে দন্তমূল তাড়ন করে উচ্চারিত হয়। এগুলোকে তাড়নজাত (flapped) ধ্বনিও বলে।


ত বর্গ -

ত থ দ ধ ন  -এ পাঁচটি বর্ণ উচ্চারণে দাঁত নীচু অংশে জিবের ডগা স্পর্শ করে।


প বর্গ -

প ফ ব ভ ম  -এগুলোতেও দুটো ঠোঁটে একে অপরকে স্পর্শ করে। তাই এগুলোকে ওষ্ঠ্য (অর্থাৎ ঠোঁট) বর্ণ (labials) বলে।


য বর্গ -

এগুলো স্পর্শবর্ণ আর উষ্মবর্ণের মাঝখানে রয়েছে। তাই এদের নাম অন্তঃস্থ বর্ণ। শ ষ স হ- এরা হ’ল উষ্মবর্ণ (Spirant); এদের উচ্চারণে জিব, তালু, দাঁত যুক্ত হয় অথচ বায়ুকে রুদ্ধ করে না। প্রথম তিনটিকে আবার শিসধ্বনিও (Sibilant) বলে।

তাছাড়াও রয়েছে ঘোষবর্ণ, অঘোষ বর্ণ, মহাপ্রাণ বর্ণ, অল্পপ্রাণ বর্ণ।

২.৫   ধ্বনি পরিবর্তনের ধারা

বিপ্রকর্ষ স্বরভক্তি (Anaptyxis) :

উচ্চারণের সুবিধার জন্য যুক্তাক্ষরের মধ্যে স্বরধ্বনি এসে যায়। যেমন : -  রত্ন > রতন, যত্ন > যতন, গর্ব > গরব, স্নান > সিনান, ভ্রু > ভুরু, গ্রাম > গেরাম, শ্লোক > শোলোক।

স্বরসঙ্গতি (Vowel Harmony) :

এখানে এক স্বরের প্রভাবে অন্যস্বরের পরিবর্তন ঘটে। যেমন : -  বুড়া > বুড়ো, দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, শুনা > শোনা, ছুটে > ছোটে।

অপিনিহিতি (Epenthesis) :

শব্দের মধ্যে ই বা উ থাকলে পূর্ব থেকেই উচ্চারণ করে ফেলার প্রবণতা। যেমন : -  আজি > আইজ, করিয়া > কইর‍্যা, দেখিয়া > দেইখ্যা।

অভিশ্রুতি (Umlaut) :

অপিনিহিতি, ধ্বনিলোপ এবং স্বরসঙ্গতির ফলে যা দাঁড়ায় তা’ই অভিশ্রুতি। কন্যা শব্দটি অপিনিহিতির ফলে হয় কইন্যা, স্বরসঙ্গতির ফলে হয় কইনে, ই-ধ্বনি লুপ্ত হলে হয় কনে, তেমনি-  রাখিয়া > রাইখা - রেখে; বসিয়া > বইসা - বসে।

তাছাড়া রয়েছে-

সমীভবন (Assimilation) :
গল্প > গল্প, কর্ম > কৰ্ম্ম।

সংকোচন (Contraction) :
পরিষদ > পর্ষদ, অন্ধকার > আন্ধার।

ঘোষী ভবন (Voicing) :
ছোট (দা) > ছোড়দা, কতদূর > কদ্দুর।

অঘোষী ভবন (De-voicing) :
বীজ > বিচি, ছাদ > ছাত।

নাসিক্য ভবন (Nasalization) :
সন্ধ্যা > সাঁঝ, চন্দ্র > চাঁদ।

ধ্বনিবিপর্যয় (Metathesis) :
পিশাচ > পিচাশ, রিকশা > রিশকা।

২.৬   ণত্ব-বিধি, ষত্ব-বিধি

কোনও ব্যক্তির কাণ্ডজ্ঞানহীনতা বোঝাতে অনেক সময় আমরা বলি, ‘লোকটার ণত্ব-যত্ন জ্ঞান নেই।’ এই ণত্ব আর যত্ব জ্ঞান যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বিদ্যালয়-বহির্ভূত ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ থেকেও বোঝা যায়। আমাদের পণ্ডিতমশাইরা এ অজ্ঞতাটা ক্ষমা করতে পারতেন না। কোথায় ‘দন্ত্য-ন’ হবে আর কোথায় হবে ‘মূর্য্য-ন’, কোথায় ‘দন্ত্য-স’ আর কোথায় ‘মূর্ধন্য-স’ হবে এর একটা ধ্বনিতাত্ত্বিক, বিজ্ঞানসম্মত বিধি রয়েছে। ‘বিধি’ শব্দটি আবার সংশয়ের সৃষ্টি করতে পারে, তাই বলে রাখা ভালো, বিধি মেনে ণত্ব, যত্ব-র ধারণা উদ্ভব হয়নি, উচ্চারণের ধারা থেকেই এর উদ্ভব, ভাষা-বিজ্ঞানীরা তা লিপিবদ্ধ করে গেছেন মাত্র। তবে হ্যাঁ সংস্কৃত-পণ্ডিতরা নাকি অনুশাসন জারি করেছিলেন ‘ফাল্গুন’, ‘গগন’ আর ‘ফেন’ লিখতে যারা ‘ণ’ ব্যবহার করে তারা ‘বর্বর’, শ্লোকটি হল, ‘ফাল্গুনে গগনে ফেনে ণত্নমিচ্ছন্তি বর্বরাঃ।’

আসা যাক ‘ন’, আর ‘ণ’র স্থান নির্ণয়ে। তবে আগে মনে রাখতে হবে দন্ত্য-ন মানে যেখান উচ্চারণে জিহ্বা দাঁতের স্পর্শ পায়; মূর্ধন্য তে স্পর্শ হয় মূর্ধা অর্থাৎ তালুর পেছন দিক।

  • এক শব্দে ঋ, র, য এই তিন বর্ণের পরবর্তী ‘ন’ হবে মূর্ধন্য, অর্থাৎ ‘ণ’।
    যেমন : -  ঋণ, তৃণ, জীর্ণ, বর্ণ।
  • স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ এবং অনুস্বার ব্যবধান থাকলেও ‘ণ’ হবে।
    যেমন : -  রণ, হরিণ, পাষাণ।
  • প্র, পারি, নির- এই তিনটি উপসর্গের পর নু, নশ, নী, নুদ, অন, নম্, ধাতুর পর 'ণ' হয়।
    যেমন : -  প্রণাম, প্রণব, পরিণয়, নির্ণয়, পরিণত, প্রণয়ন, প্রণীত, প্রাণ।
  • পদান্তে ‘ণ’ হয় না।
    যেমন : -  শ্রীমান, ধীমান।
  • একপদে স, র, য এবং অন্যপদে ন থাকলে ‘ন’ই হবে।
    যেমন : -  হরিনাম, গিরিনন্দিনী, সর্বনাম, দুর্নাম।
  • প্র, পরা, পূর্ব ও অপর- এর পরবর্তীতে অহ্ন, থাকলে এরপর 'ণ' হবে।
    যেমন : -  প্রাহু, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ। তবে মধ্যাহ্ন সায়াহ্ন তেণ হবে না।
  • পর, পার, উত্তর, চন্দ্র, নার, রাম শব্দের পর ‘অয়ন’ প্রত্যয় থাকলে ‘ণ’ হয়।
    যেমন : -  পরায়ণ, পারায়ণ, উত্তরায়ণ, চান্দ্রায়ণ, নারায়ণ, রামায়ণ।
  • ট, ঠ, ড-র আগে ণ বসবে; যেমন বণ্টন, লুণ্ঠন, তাণ্ডব।
    তাছাড়াও কতগুলো শব্দে কোনও বর্ণের প্রভাব ছাড়াই ‘ণ’ হয় একে বলে স্বাভাবিক ণত্ব। জ্যোতিভূষণ চাকী কয়টি পয়ারবদ্ধ পঙক্তি লিখে দিয়েছেন স্বাভাবিক ণত্ব মনে রাখার জন্য :
  • বাণিজ্য ভণিতা ভণে লাবণ্য শোণিত,
    আপণ কঙ্কণ কোণ গণনা গণিত,
    চাণক্য নিরূণ তৃণ।
    বীণা কণা মণি পাণি বাণ পণ্য পণ
    মাণিক্য নৈপুণ্য গণ্য ফণী পুণ্য গণ॥

  • অ-তৎসম শব্দে সব সময়ই ‘ন’, ণত্ব নয় কদাপিও।
    উদাহরণ : -  পুরনো, ঠাকরুন, ঝরনা, কোরান, জার্মান, দূরবিন, ট্রেন।

ষ-ত্ব বিধি :

যে-সমস্ত নিয়মে দন্ত্য-স (স) এবং মূর্ধন্য স-হবে (ষ) তাই ষত্ববিধি।

নিয়ম : -

  • ঋ-কারের পর মূর্ধন্য স (ষ)।
    যেমন : -  ঋষি, ঋষভ।
  • অ-আ ভিন্ন স্বর, ক্ এবং র্-এর পরবর্তী বিভক্তি বা প্রত্যয়ের স মূর্ধন্য স (ষ) হয়।
    যেমন : -  শ্রীচরণে + সু = শ্রীচরণেষু, (কিন্তু সুচরিতাসু)
  • প্রত্যয়ের ‘স’।
    যেমন : -  জিগীষা, বুভুক্ষা।
  • ‘সাৎ’ প্রত্যয়ের পর ‘ষ’ হয় না।
    যেমন : -  ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ।
  • বি পূর্বক সহ ধাতুর স, মূর্ধন্য স (ষ) হয় ।
    যেমন : -  দুর্বিষহ।
  • সু, বি, দূর এ তিন উপসর্গের পর মূর্ধন্য স (ষ) হয়।
    যেমন : -  সুষম, বিষম।
  • ই-কারান্ত এবং উ-কারান্ত উপসর্গের পরবর্তী স্থা, সিচ্, সিধ, সঞ্চ, সদ, নি প্রভৃতি ধাতুর ‘স’, ‘ষ’ হয়।
    যেমন : -  অনুষ্ঠান, অভিষেক, নিষেধ, বিষাদ, নিষ্ঠা।
  • সমাসের প্রথম পদের শেষে ই, উ, ঝ, ও থাকলে পরবর্তী পদের প্রথম স, মূর্ধন্য স (ষ) হয়।
    যেমন : -  যুধিষ্ঠির, সুষ্ঠ, হরিষেণ।
  • ত-কারাদি কৃৎ-প্রত্যয় যুক্ত হলে কতকগুলো শ-কারান্ত ধাতুতে, মূর্ধন্য স (ষ) হয়, এবং ত-স্থানে ‘ট’ হয়।
    যেমন : -  (ক্লিশ্+ত = ক্লিষ্ট), দৃষ্ট, দ্রষ্টা, নিবিষ্ট।
  • ট এবং ঠ-এর পূর্বে, মূর্ধন্য স (ষ) হয়।
    যেমন : -  কষ্ট, মিষ্ট, বিনষ্ট।
একটি প্রচলিত ছড়া -
ঋ-কার র-কার ষ-কারের পর
ন-কার যদি থাকে
খ্যাঁচ ক’রে তার কাটবে মাথা
কোন্ বাপ তার রাখে।
[মাথা কাটা মানে মাথা উঁচিয়ে থাকা ‘ণ’-কে উড়িয়ে দেওয়া]
শূন্য/শূণ্য শূন্য বানানে মূ্যন্য দেবার প্রবণতাটা আমাদের খুব বেশি। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জড়িয়ে একটা কথা প্রচলিত: ‘একেই তো রিক্ত, (শূন্য) তার আবার মাথা উঁচু (ণ) কেন।’ আসলে কবিগুরু কা’কে কখন তা বলেছেন জানা যায় না, তবে শূন্য বানান বিভ্রম এড়াতে কথাটি সততই স্মর্তব্য।
স্বাভাবিক ষত্ব-র উদাহরণগুলো জ্যোতিভূষণ চাকী
পয়ার ছন্দে গেঁথে দিয়েছেন এভাবে :
আষাঢ় ঈষৎ উষর নিক
বিশেষণ ভাষা ঊষা পুষ্প দোষ রোষ
মহিষ মুষিক পূষা পুরুষ প্রদোষ।
প্রত্যুষ ভূষণ কোষ ভূষা শল্প শেষ
বাষ্প ষট্ ভাষ্য পোষ্য অভিলাষ মেষ।
শূন্য/শূণ্য শূন্য বানানে মূ্যন্য দেবার প্রবণতাটা আমাদের খুব বেশি। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জড়িয়ে একটা কথা প্রচলিত: ‘একেই তো রিক্ত, (শূন্য) তার আবার মাথা উঁচু (ণ) কেন।’ আসলে কবিগুরু কা’কে কখন তা বলেছেন জানা যায় না, তবে শূন্য বানান বিভ্রম এড়াতে কথাটি সততই স্মর্তব্য।
স্বাভাবিক ষত্ব-র উদাহরণগুলো জ্যোতিভূষণ চাকী
পয়ার ছন্দে গেঁথে দিয়েছেন এভাবে :
আষাঢ় ঈষৎ উষর নিক
বিশেষণ ভাষা ঊষা পুষ্প দোষ রোষ
মহিষ মুষিক পূষা পুরুষ প্রদোষ।
প্রত্যুষ ভূষণ কোষ ভূষা শল্প শেষ
বাষ্প ষট্ ভাষ্য পোষ্য অভিলাষ মেষ।
২.৭   সন্ধি

সন্ধি শব্দটি ইতিহাস বইতে বিস্তর পাওয়া যায়, তাছাড়া রাজনৈতিক পরিভাষায়ও শব্দটির ব্যাপক প্রচলন। আজকের পৃথিবীতে যুদ্ধের ঘটনা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সন্ধির খবরও। রাজনৈতিক জীবনে যেমন সন্ধি একটি বহুল প্রচলিত শব্দ, তেমনি ব্যাকরণ শাস্ত্রেও সন্ধির প্রচলন সমধিক। বিবদমান প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যেমন সন্ধি হয় তেমনি সন্ধি বিচ্ছেদও হয় অহরহ, ঠিক যেমনটি ব্যাকরণ পাঠে আমরা পাই।

যা’ই হোক, আমরা শব্দটিকে বুঝবার চেষ্টা করি।

সন্ধি কী? পাশাপাশি দু’টি ধ্বনির মিলনের নামই সন্ধি। লক্ষ করুন দু'টি ‘ধ্বনি’র শব্দটিতে, দু’টি ‘বর্ণের’ নয়। সন্ধি আসলে বর্ণের সঙ্গে নয়, ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনির মিলন। বিষয়টি ধ্বনিতত্ত্বের অন্তর্গত। ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ববিদ ব্লুমফিল্ড বলেছেন, ‘Literary, it means putting together’। অর্থাৎ একসঙ্গে ধারণ করা (সম্+ধি)।

এখানে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলার সন্ধি সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম মেনে চলে না। অর্থাৎ সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম বাংলা ভাষায় সব সময় প্রযোজ্য হতে পারে না, কারণ সংস্কৃত উচ্চারণ আর বাংলা উচ্চারণ আলাদা। তবে বাংলার শব্দসম্ভারে বিপুল তৎসম শব্দ রয়েছে, তাই এসব শব্দের সন্ধি সংস্কৃত মতে হয়, এমনকী তৎসম আর অ-তৎসম শব্দের সন্ধিতেও সংস্কৃত নিয়মও কার্যকরী হয়ে যায়, যেমন আইনানুসারে, দিল্লীশ্বর (নিমন্ত্রণপত্রে দেখা যায় ‘সেন্ট্রাল রোডোস্থিত’)।

আবার বন্ + অন্তর যদি সংস্কৃত নিয়মে সন্ধি হত তবে হত বনন্তর। এখানে সংস্কৃত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শব্দটি হল 'বনান্তর'। রবীন্দ্রসংগীতে আছে 'বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী, দিকপ্রান্তে, বন বনান্তে'। এখানে বনান্ত শব্দটির শুদ্ধিকরণ কি আমরা মেনে নেব? নজরুল ইসলামের সেই গান 'এল এই বনান্তে পাগল বসন্ত'- এতে বনান্ত শব্দটির কোনও বিকল্প হতে পারে কি?

এতটা কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য সংস্কৃত নিয়মে সন্ধিতে ধ্বনির পরিবর্তন প্রতিফলিত হয় বর্ণে, অর্থাৎ বানানে। কিন্তু খাঁটি বাংলা সন্ধিতে ধ্বনির পরিবর্তন বানানে প্রতিফলিত হয় না। যেমন মীন অক্ষি মিলে লেখা হল মীনাক্ষি, কিন্তু মুখে বলা হচ্ছে মিনাক্সি। তবে আজকাল গণমাধ্যমের প্রভাবে বাঙালি মেয়েরা লীলাক্সি, মীনাক্সি হয়ে যাচ্ছে, টিভির অনুকরণে ছোটরা ঘরে বসে খেলছে ‘অন্তাকস্‌রী’।

সন্ধি ভাষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তা তো নিশ্চিতই, তাছাড়াও ভাষার মাধুর্য বাড়াতেও এর বিশেষ ভূমিকার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জ্যোতিভূষণ চাকী মহাশয়। তিনি উদ্ধার করেছেন রবীন্দ্রসংগীতের দু’টি কলি, যেখানে ধ্বনিমাধুর্যে উদ্বেল দুটো সন্ধির নমুনা রয়েছে :

অয়ি ভুবনমনোমোহিনী

অয়ি নির্মল সূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী।....

সন্ধি মূলত আমাদের বাক্সক্রিয়ায় একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। দ্রুত উচ্চারণে স্বাভাবিকভাবেই পর-পর উচ্চারিত ধ্বনির মধ্যে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তন নানা ধরনের : -

  • মিলন মাত্র : স্ব + অধীনতা = স্বাধীনতা
  • পূর্ববর্ণের বিকৃতি : তদ্‌ + মাত্র = তন্মাত্র
  • পরবর্ণের বিকৃতি : রাজ + নী = রাজ্ঞী
  • পূর্ববর্ণের লোপ অতঃ + এব = অতএব
  • উভয় বর্ণের বিকৃতি : উদ্‌ + শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল

সন্ধি কত প্রকার ও কী কী ——

সন্ধি তিন রকম : -  স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।

স্বরসন্ধি

স্বরবর্ণে স্বরবর্ণে সন্ধিই স্বরসন্ধি। অর্থাৎ পরস্পর সন্নিহিত দুইটি স্বরবর্ণ মিলে একটি স্বরবর্ণে পরিণত হলে হয় স্বরসন্ধি।

স্বরসন্ধির সূত্রগুলো নিম্নরূপ : -

স্বরসন্ধির সূত্র – ১
অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়। আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
অ + অ = আ।  শশ + অঙ্ক = শশাঙ্ক
অ + আ = আ।  কুশ + আসন = কুশাসন
আ + অ = আ।  কথা + অমৃত = কথামৃত
আ + আ = আ।  বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
স্বরসন্ধির সূত্র – ২
ই-কার কিম্বা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঈ-কার হয় এবং ঈ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
ই + ই = ঈ।  গিরি + ইন্দ্র = গিরীন্দ্র
ই + ঈ = ঈ।  ক্ষিতি + ঈশ = ক্ষিতীশ
ঈ + ই = ঈ।  শচী + ইন্দ্র = শচীন্দ্র
ঈ + ঈ = ঈ।  সতী + ঈশ = সতীশ
স্বরসন্ধির সূত্র – ৩
উ-কার কিংবা উ-কারের পর উ-কার কিংবা উ-কার থাকলে উভয়ে মিলে উ-কার হয় এবং উ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
উ + উ = উ।  কটু + উক্তি = কটূক্তি
উ + উ = উ।  লঘু + উর্মি = লঘুর্মি
উ + উ = উ।  বধূ + উৎসব = বধূৎসবদ্র
উ + উ = উ।  ভু + উর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব
স্বরসন্ধির সূত্র – ৪
অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়।
যেমন : -
অ + ই = এ।  দেব + ইন্দ্র = দেবেন্দ্র
অ + ঈ = এ।  গণ + ঈশ = গণেশ
আ + ই = এ।  যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট
আ + ঈ = এ।  রমা + ঈশ = রমেশ
স্বরসন্ধির সূত্র – ৫
অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ বা উ থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয় এবং ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
অ + উ = ও।  দেব + উপম = দেবোপম
অ + উ = ও।  চল + ঊর্মি = চলোর্মি
স্বরসন্ধির সূত্র – ৬
অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে দুটোতে মিলে অর্ হয়। অর্-এর 'অ' পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং 'র' রেফ হয়ে পরবর্ণের শীর্ষে যুক্ত হয়।
যেমন : -
অ + ঋ = অর্‌।  দেব + ঋষি = দেবর্ষি
আ + ঋ = অর্‌।  মহা + ঋষি = মহর্ষি
স্বরসন্ধির সূত্র – ৭
অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে দুটোতে মিলে ঐ-কার হয়। ঐ-কার যুক্ত হয় পূর্ববর্ণে।
যেমন : -
অ + এ = ঐ।  জন + এক = জনৈক
অ+ ঐ = ঐ।  মত + ঐক্য = মতৈক্য
আ+ এ = ঐ।  সদা + এব = সদৈব
আ + ঐ = ঐ।  মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য
স্বরসন্ধির সূত্র – ৮
অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে ও কার হয়।
যেমন : -
অ + ও = ঔ।  বন + ওষধি = বনৌষধি
অ +ঔ = ঔ।  উত্তম + ঔষধি = উত্তমৌষধি
আ + ও = ঔ।  মহা + ওষধি = মহৌষধি
আ + ঔ = ঔ।  মহা + ঔদার্য = মহৌদার্য
স্বরসন্ধির সূত্র – ৯
ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই এবং ঈ থাকলে 'য' হয় এবং 'য', য-ফলা (্য) রূপে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
ই + অ = য (‌্য)।  অতি + অন্ত = অত্যন্ত
ই + আ = যা (‌্যা)।  ইতি + আদি = ইত্যাদি
ই + উ = যু (‌্যু)।  প্রতি + উত্তর = প্রত্যুত্তর
ই + ঊ = যু (‌্যূ)।  প্রতি+ ঊষ = প্রত্যুষ
ই + অ = য (্য)।  নদী + অম্বু = নদ্যম্বু
ই + আ = যা (‌্যা)।  মসী + আধার = মস্যাধার
স্বরসন্ধির সূত্র – ১০
উ-কার এবং ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কারের স্থানে 'ব' (অন্ত:স্থ) হয়, 'ব' যুক্ত হয় পূর্ববর্ণে।
যেমন : -
উ + অ = ব।  সু + অল্প = স্বল্প
উ + আ =বা।  সু + আগত = স্বাগত
উ + ই = বি।  অনু + ইত = অন্বিত
উ + ঈ = বী।  অনু + ঈশ্বর = তন্বীশ্বর
উ + এ = বে।  অনু + এষণ = অন্বেষণ
ঊ + অ = ব।  সরযূ + অম্বু = সরয্বম্বু
স্বরসন্ধির সূত্র –১১
এ-কার কিংবা ঐ-কারের পর স্বরবর্ণ থাকলে এ-কারের স্থানে 'অয়' এবং ঔ কারের স্থানে 'অয়ে' হয়। অয় এবং আয় যুক্ত হয় পূর্ববর্ণে, আর পরের স্বর য়-কার কিংবা ব-কারের সঙ্গে মিলে যায়।
যেমন : -
এ + অ = অয়।  নে + অন = নয়ন
ঐ + অ = আয়।  গৈ + অক = গায়ক
স্বরসন্ধির সূত্র – ১২
স্বরবর্ণ পরে থাকলে ও-কারের স্থানে 'অব' এবং ঔ-কারের স্থানে 'আব্‌' হয়। অব + আব্-এ অ এবং আ পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় এবং পরের স্বর 'ব'-এর সঙ্গে মিলে যায়।
যেমন : -
ও + অ = অব।  ভো + অন = ভবন
ও + ই = অবি।  পো + ইত্র = পবিত্র
ঔ + অ = অব।  পৌ + অক = পাবক
ঔ + ই = অবি।  নৌ + ইক = নাবিক
স্বরসন্ধির সূত্র – ১৩
ঋ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে ঋ-স্থানে র হয়, র-ফলা (্র) হয়ে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং পরে স্বরবর্ণের সঙ্গে মিলে যায়।
যেমন : -
ঋ + অ = ব।  পিতৃ + অনুমতি = পিত্রানুমতি
ঋ + আ = বা।  মাতৃ + আদেশ = মাত্রাদেশ
ঋ + ই = রি।  পিতৃ + ইচ্ছা = পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ = রু।  পিতৃ + উপদেশ = পিত্রুপদেশ

ব্যঞ্জনসন্ধি

ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ব্যঞ্জনবর্ণ বা স্বরবর্ণের মিলন হলে হয় ব্যঞ্জনসন্ধি। ব্যঞ্জনসন্ধিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয় : -

  • ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে সন্ধি
  • ব্যঞ্জনে স্বরে সন্ধি
  • স্বরে ব্যঞ্জনে সন্ধি

ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্রগুলো নিম্নরূপ : -

(ক)  ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে সন্ধি

ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ১
চ কিংবা ছ পরে থাকলে ত ও দ-এর পরিবর্তে চ হয়।
যেমন : -
ত্ + চ = চ্চ।   চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র
দ্‌ + চ = চ্চ।   উদ্‌ + চারণ = উচ্চারণ
ত্ + ছ = চ্ছ।   চলৎ + ছবি = চলচ্ছবি
দ্‌ + ছ = চ্ছ।   উদ্‌ + ছেদ = উচ্ছেদ
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ২
যদি জ বা ঝ পরে থাকে তবে ত বা দ্‌ স্থানে জ হয়।
যেমন : -
ত্ + জ = জ্জ।   যাবৎ + জীবন = যাবজ্জীবন
দ্ + জ = জ্জ।   তদ্‌ + জন্য = তজ্জন্য
দ্ + ঝ = জঞ্ঝ।   বিপদ্‍ + জঞ্ঝা = বিপজঞ্ঝা
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ৩
যদি পরের অন্তস্থিত ত্ বা দ্‌-এর পর তালব্য স থাকে তা হলে ত্-দ স্থানে চ্ এবং শ স্থানে ছ হয়।
যেমন : -
ত্ + শ = চ্ছ।  চলৎ + শক্তি = চলচ্ছক্তি
দ্ + শ = চ্ছ।  উদ্‌ + শিষ্ট = উচ্ছিষ্ট
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ৪
যদি পদের অন্তে স্থিত ত্-এর পরে হ থাকে তাহলে ত্-দ স্থানে এবং হ স্থানে ধ হয়।
যেমন : -
ত্ + হ = দ্ধ।  তৎ + হিত = তদ্ধিত
দ্ + হ = দ্ধ।  উদ্‌ + হত = উদ্ধত
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ৫
চ বর্গের পর ন থাকলে ন-স্থানে ঞ হয়।
যেমন : -
চ + ন = চ্ঞ।   যাচ + না = যাচ্ঞা
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ৬
যদি ড - ঢ পরে থাকে তাহলে ত্ - দ স্থানে ড্ হয়।
যেমন : -
দ্‌ + ড = ড।  উদ্‌ + ডীন = উড্ডীন
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ৭
যদি ল্ পরে থাকে তাহলে ত্ - দ্‌ স্থানে ল্ হয়।
যেমন : -
দ্‌ + ল = ল।  উৎ + লেখ = উল্লেখ
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –-৮
ন্‌ কিংবা ম্ পরে থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে ন্ এবং ম স্থানে ঙ হয়।
যেমন : -
ত্ + ম = ন্ম।  চিৎ + ময় = চিন্ময়
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –৯
য-এর পরে ত কিংবা থ থাকলে ত্ স্থানে ট এবং থ স্থানে ঠ হয়।
যেমন : -
বৃষ + তি = বৃষ্টি
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –১০
ক – খ – গ - ঘ পরে থাকলে পূর্বপদের ম-স্থানে ং‍ বর্ণ হয়।
যেমন : -
কিম্ + কর = কিঙ্কর
সম্ + গীত = সংগীত
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –১১
চ থেকে ম পর্যন্ত কোনও বর্ণ পরে থাকলে পূর্বপদের ম্-স্থানে পরবর্তী বর্গীয় বর্ণটির পঞ্চম বর্ণ হয়।
যেমন : -
সম্ + চয় = সঞ্চয়
সম্ + ধি = সন্ধি
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –১২
মূর্ধন্য ‘স’-কারের পর ত স্থানে ট, এবং থ স্থানে ঠ হয়।
যেমন : -
তুম্ + ত = তুষ্ট
ষ + থ = ষষ্ঠ
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –১৩
ম্-এর পর কৃত, কার, কারণ, কৃতি ইত্যাদি থাকলে ম স্থানে ং‍ হয়, এবং স্ আগম (স্বরাগম) হয়।
যেমন : -
সম্ + কৃত = সংস্কৃত
সম্ + কৃতি = সংস্কৃতি
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র –১৪
উষ্মবর্ণ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তে স্থিত ন, ং‍-এ পরিবর্তিত হয়।
যেমন : -
হিন্ + সা = হিংসা
সিন্ + হ = সিংহ

(খ)  ব্যঞ্জনবর্ণে স্বরবর্ণে সন্ধি

ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ১৫
বর্গের প্রথম বর্ণের পর স্বরবর্ণ থাকলে প্রথম বর্ণ স্থানে সেই বর্গের তৃতীয় বর্ণ হয়। পরের স্বর এই তৃতীয় বর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
দিক্ + অন্ত = দিগন্ত
বাক্ + আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর

(গ)  ব্যঞ্জনবর্ণে ব্যঞ্জনবর্ণে সন্ধি

ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র – ১৬
স্বরবর্ণের পর ছ থাকলে স্বরবর্ণের পরে তার আগে চ্ আগম হয়।
যেমন :-
প্র + চ্ছ = প্রচ্ছদ
পূর্ণ + ছেদ = পূর্ণচ্ছেদ


বিসর্গ সন্ধি

স্বরবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে বিসর্গের সন্ধি হলে বলে বিসর্গ সন্ধি। বিসর্গ দুই প্রকারের :- -জাত এবং স্-জাত।

  • র-জাতের, যেমন : -   পুনর্ = পুনঃ
  • স্‍-জাতের, যেমন : -   শিরস্ = শির

বিসর্গ সন্ধির সূত্রগুলো নিম্নরূপ : -

বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ১
বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে শ; ট/ঠ পরে থাকলে খ এবং ত্‍/থ পরে থাকলে স্ হয়।
যেমন : -
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
শিরঃ + চ্ছেদ = শিরশ্ছেদ
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
মনঃ + তাপ = মনস্তাপ
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ২
অ-কার পরে থাকলে স-জাত বিসর্গ ও-কারে পরিণত হয়, এবং পরবর্তী পদের অ-কার লুপ্ত হয়ে এই ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
মনঃ + অভিলাষ = মনোভিলাষ
ততঃ + অধিক = ততোধিক
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৩
বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব'ই পরে থাকলে স-জাত বিসর্গ স্থানে ও-কার হয়। এবং ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
যেমন : -
য়ঃ + বৃদ্ধি = বয়োবৃদ্ধি
সরঃ + বর = সরোবর
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৪
বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম বর্ণ অথবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে র হয় এবং রেফ হয়ে পরবর্ণের মাথায় বসে।
যেমন : -
পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম
অন্তঃ + যামী = অন্তর্যামী
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৫
অ, আ ভিন্ন স্বরবর্ণের পরবর্তী বিসর্গের পর যদি স্বরবর্ণ, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম কিংবা য, র, ল, ব, হ থাকে তবে বিসর্গ স্থানে র হয়, এবং র্ রেফ হয়ে পর বর্ণের মাথায় বসে।
যেমন : -
দুঃ + দম = দুর্দম
আশীঃ + বাদ = আর্শীবাদ
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৬
র-পরে থাকলে বিসর্গের স্থানের র লোপ পায় এবং বিসর্গের পূর্বস্বর দীর্ঘ হয়।
যেমন : -
নিঃ + রস = নীরস
নিঃ + রোগ = নীরোগ
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৭
ক, খ, প, ফ পরে থাকলে নিঃ, আনিঃ, বহিঃ, দুঃ, প্রাদুঃ, চতুঃ- এসব শব্দের বিসর্গ স্থানে স্ হয়।
যেমন : -
বহিঃ + কার = বহিষ্কার
আবিঃ + কার = আবিষ্কার
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৮
কৃ-ধাতু নিষ্পন্ন পদের নমঃ, পুরঃ, তিরঃ, শ্রেয়ঃ থাকলে বিসর্গ স্থানে স্ হয়।
যেমন : -
পুরঃ + কৃত = পুরস্কৃত
তিরঃ + কৃত = তিরস্কৃত
বিসর্গ সন্ধির সূত্র – ৯
কর, কার, কাম, কাণ্ড পরে থাকলে পূর্ববর্তী অ-কারের বিসর্গ স্থানে স্ হয়।
যেমন : -
মনঃ + কাম = মনস্কাম
পুরঃ + কার = পুরস্কার
অনুশীলনী
(ক)
  • বাংলা ভাষায় কয়টি ধ্বনি?
  • বাংলা ভাষায় কয়টি বর্ণ?
  • বাংলা ভাষায় কোন্ কোন্ বর্ণ এখন পরিত্যক্ত?
  • ধ্বনি বলতে কী বোঝায়?
  • ধ্বনি আর বর্ণের পার্থক্য কী?
  • শব্দ, বর্ণ আর ধ্বনির পার্থক্য কী?
  • স্বরধ্বনি কী?
  • ব্যঞ্জনধ্বনি কী?
  • স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ কা'কে বলে?
  • বর্ণ আর অক্ষরের সম্পর্ক কী?
  • বাংলা বর্ণের তিনটি স-ধ্বনির নামকরণের কারণ কী?
(খ)
সংজ্ঞা দিন : -
 
  • অপিনিহিতি
  • স্বরভক্তি
  • ধ্বনি বিপর্যয়
(গ)
  • শ, ষ, স, হ- এরা কী বর্ণ?
  • প, ফ, ব, ভ, ম- এদের কেন ওষ্ঠ্যবর্ণ বলে?
  • তালব্য বর্ণ কয়টি এবং কী কী?
  • ট-বর্ণের উচ্চারণে জিব কোথায় স্পর্শ করে?
  • ঘৃষ্ট বর্ণ কী? কোন বর্ণকে ঘৃষ্ট বর্ণ বলে?
(ঘ)
  • ণ-ত্ব বিধান কা'কে বলে? উদাহরণ দিয়ে এর কয়েকটি নিয়ম লিখুন।
  • ষ-ত্ব বিধান কী? উদাহরণ দিয়ে কয়েকটি নিয়ম লিখুন।
  • ‘ফাল্গুনে গগনে ফেনে ণত্বমিচ্ছন্তি বর্বরা” – কথাটি মানে কী?
  • অ-তৎসম শব্দে কি ণ-ত্ব বিধি, ষত্ব বিধি প্রযোজ্য? উদাহরণ দিয়ে বোঝান।
  • বাংলা প্রবাদ ‘ণত্ব–ষত্ব জ্ঞান’ দিয়ে একটা বাক্য রচনা করুন।
(ঙ)
শুদ্ধ করুন : -
 
  • অনুদিত
  • গগণ
  • কল্যাণীয়াষু
  • প্রীতিভাজনেসু
  • পরিস্কার
(চ)
তদ্ভব ও বিদেশি শব্দের বানানে কি ণত্ববিধি, ষত্ববিধি প্রযোজ্য? দৃষ্টান্ত সহ বুঝিয়ে দিন।
(ছ)
৩৪টি স্বাভাবিক ণত্ব-এর উদাহরণ যুক্ত শব্দ লিখুন।
(জ)
৩৩টি স্বাভাবিক ষত্ব-এর উদাহরণ যুক্ত শব্দ লিখুন।
(ঝ)
  • সন্ধি বলতে কী বোঝায়? সন্ধি কত প্রকার ও কী কী?
  • ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ববিদ সন্ধির কী সংজ্ঞা দিয়েছেন?
  • সংস্কৃত সন্ধি আর বাংলা সন্ধি কি এক প্রকার?
  • স্বরসন্ধি কা'কে বলে? এ সন্ধির যে কোন দুইটি সূত্র দিন।
  • ব্যঞ্জনসন্ধি কী? চার প্রকারের ব্যঞ্জনসন্ধির নাম লিখুন।
(ঞ)
  • বাংলায় কয়েকটি বিসর্গসন্ধির উদাহরণ দিন।
  • সন্ধি বিচ্ছেদ করুন : -
    শীতার্ত, চলচ্চিত্র, উচ্ছৃঙ্খল, তন্মধ্য, অত্যন্ত।
  • সন্ধি করুন : -
    গা + পদ, উৎ + লেখ, রজ + নী, বন + অন্ত, প্রতি + আশা।
  • সূত্র উল্লেখ করে সন্ধি বিচ্ছেদ করুন : -
    কাঁসারি, মিশকালো, রাদ্দিন, বট্‍ঠাকুর, আধেক।
  • ‘খাঁটি বাংলা সন্ধিতে ধ্বনির পরিবর্তন বানানে প্রতিফলিত হয় না’  –দু’টি উদাহরণ দিন।
(ট)
নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদে সন্ধি নিষ্পন্ন পদ বের করুন এবং সন্ধি বিচ্ছেদ করুন : -
নৌকারোহিগণ এইরূপে কল্পনা করিতেছিল, ইত্যবসরে জলরাশি মধ্যে ভৈরব কল্লোল উত্থিত হইল। নাবিকেরা বিশেষ জনিত যে, ঐ সকল স্থানে জলোচ্ছ্বাসকালে তটদেশে এইরূপ প্রচণ্ড তরঙ্গাভিঘাত হয় যে, তখন নৌকাদি তীরবর্তী থাকিলে তাহা খণ্ড খণ্ড হইয়া যায়।
(বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কপালকুণ্ডলা)

দ্বিতীয় পত্র
অধ্যায় - 
ধ্বনিতত্ত্ব