বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সম্মেলনের শিলচরে প্রতিষ্ঠিত 'বঙ্গভবন' সম্পর্কে নৈর্ব্যক্তিকভাবে কিছু বলা বা লেখা একান্ত প্রয়োজন। তবুও কিছু ব্যক্তিগত কথা এসে পড়ে। তাই ব্যক্তিগত কথা দিয়েই শুরু করছি।
সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই বঙ্গসাহিত্য ও সম্মেলনের প্রতি একটা আকর্ষণ ও দুর্বলতা আমার মনের মধ্যে ছিল। করিমগঞ্জ ও শিলচরে অনুষ্ঠিত একাধিক বার্ষিক/দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে দর্শক ও শ্রোতা হিসাবে উপস্থিত থেকেছি। সম্মেলনের একজন সাধারণ সদস্য হিসাবে ২০০৩ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে নরসিং উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমিতির দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলাম। খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে সেই সভাতেই আমাকে কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়।
সেই বছরের মার্চ মাসে করিমগঞ্জে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক অধিবেশনের অব্যবহিত পরে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলা সমিতির প্রথম কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ভবন নির্মাণের জমির জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকবর্গের নিকট আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সভাতে জেলা সমিতির নামে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট খোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার কয়েক দিন পূর্বে অর্থাৎ মে মাসের ৫ তারিখে জেলা সমিতির সভাপতি হিসাবে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের জন্য একখানা আবেদন জেলা সভাপতি হিসাবে কাছাড় জেলার উপায়ুক্তের নিকট দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে শিলচরের বাইরের সচল ও সম্ভাব্য ১৮টি আঞ্চলিক সমিতির জন্য সরকারি জমি বণ্টনের অনুরোধ জানিয়ে কাছাড় জেলা ভূ-বাসন আধিকারিকের নিকট আবেদন জানানো হয়। জেলা ভূ-বাসন আধিকারিক লিখিতভাবে তাঁর অধীনস্থ আধিকারিকদের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু বিশেষভাবে তদ্বির নিতে অক্ষমতার জন্য এই প্রচেষ্টা সাফল্য লাভ করেনি।
শিলচর শহরে সরকারি জমি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হওয়ায় ২০০৩ সনের ১৯ অক্টোবর জেলা সমিতির বর্ধিত সভায় মূল প্রস্তাব সংশোধন ক্রমে তেরোজন সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্মাণ সমিতি গঠিত হয়। সদস্যরা ছিলেন- দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস, অনন্ত দেব, সুজিত কুমার ভট্টাচার্য, মৃণালকান্তি দত্ত বিশ্বাস, সমীর কুমার দাস, প্রদীপ আচার্য, শান্তনু দাস, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, তৈমুর রাজা চৌধুরী, সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য, শ্যামলকান্তি দেব, বিনোদবিহারী দেবনাথ ও প্রণব কুমার দাস।
তখন পর্যন্ত জেলা সমিতির হাতে কোনও অর্থ ছিল না। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় সম্মেলনের বরিষ্ঠ সদস্য অনন্ত দেব মহাশয় যিনি সম্মেলনের একাদশ অধিবেশনের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি জেলা সমিতির সম্পাদক প্রদীপ আচার্যকে ডেকে তাঁর হাতে গচ্ছিত অর্থ ভবন নির্মাণের জন্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং সেই বৎসরের ১৩ ডিসেম্বর জেলা কমিটির বর্ধিত জরুরি সভায় এক লক্ষ টাকার সেভিংস সার্টিফিকেট এবং নগদ তিন হাজার কুড়ি টাকা হস্তান্তর করেন।
একটি বিষয় উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু হওয়া থেকেই কার্যকরী সমিতির সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ভবন নির্মাণের বিষয়ে লক্ষণীয় উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। তদুপরি এই সময়কালে জেলা সমিতির বিভিন্ন কার্যসূচি যথারীতি উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়। এই সব কাজে সম্পাদক প্রদীপ আচার্যের দৌড়ঝাঁপ এবং ঘন ঘন বৈঠক ডেকে আলোচনা ও পরামর্শ নেওয়ার প্রয়াস আমার কাছে আজ অসাধারণ বলে মনে হয়। লক্ষণীয় যে নতুন কার্যকরী সমিতি গঠনের এক বৎসরের মধ্যে ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ হাতে আসে এবং ভবন নির্মাণ উপসমিতিও গঠিত হয়।
এবার আসি ভবন নির্মাণের জন্য জমি সংগ্রহের বিষয়ে। কাছাড় জেলার উপায়ুক্তের নিকট ২০০৩ এর মে মাসে আবেদন জানানোর পর ভূবাসন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং বর্তমানে যে স্থানে বঙ্গভবন অবস্থিত তারই একটা অংশ বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য ভূ-বাসন আধিকারিক উপায়ুক্তের নিকট প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব যাতে পরবর্তী মহকুমাভিত্তিক জমি বণ্টন উপদেষ্টা কমিটিতে উত্থাপিত এবং অনুমোদিত হয় সেজন্য উপদেষ্টা কমিটির প্রায় সকল সদস্যের কাছে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ রাখা হয়। এত তোড়জোর করার প্রধান কারণ হল প্রস্তাবিত ভূমিটি বণ্টনযোগ্য সাধারণ খাস জমি ছিল না, সেটা ছিল জেলা আদালতের সংরক্ষিত জমি এবং সেই মুহূর্তে শিলচর এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের নামে নির্দিষ্ট। অবশেষে ২০০৪ সনের ২২ জানুয়ারি ভূমি বণ্টন উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসে এবং ৮ নং প্রস্তাবে ৫ কাঠা জমি বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের নামে বণ্টনের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই বৎসরের ২৫ মার্চ তারিখে প্রস্তাবটি উপায়ুক্ত আসাম সরকারের নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু প্রস্তাবে একটি ভুল ছিল যা আমাদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য ছিল না। প্রস্তাব ছিল ভূমি 'বন্দোবস্তের'-যার জন্য জমির মূল্যের প্রিমিয়াম দিতে হত। তাই উপায়ুক্তের সঙ্গে দেখা করে ভূমি বন্দোবস্তের প্রস্তাবের স্থলে ভূমি বণ্টনের সংশোধিত নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়। এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ না করে পারছি না। জেলা সভাপতি হিসাবে আমি ও সম্পাদক হিসাবে প্রদীপ আচার্য সমিতির টাকা পয়সার হিসাবপত্র যথাযথভাবে রাখার তাগিদ অনুভব করি, তাই কলেজ রোডের কালিদাস চৌধুরীর বাড়িতে যাই এই বিষয়ে তাঁর উপদেশ নেওয়ার জন্য। কয়েক মিনিট কথাবার্তার পরই তিনি বলেন রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম রায় মহাশয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত কাজের জন্য তিনি দেখা করতে যাবেন। তখনই আমি ও প্রদীপ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেওয়ার জন্য কালিদাস চৌধুরীর সঙ্গে সার্কিট হাউসে চলে যাই। কালিদাস চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত কথা বলার পর আমি মন্ত্রীকে বঙ্গসাহিত্যের জমির যে প্রস্তাব সচিবালয়ে গেছে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলি। মন্ত্রী গৌতম রায় মহাশয় উৎসাহ দেখিয়ে বলেন তিনি দিসপুর থেকে জমি বণ্টনের সরকারি অনুমোদন পাঠিয়ে দেবেন এবং তাঁর সঙ্গে আসা সুজন দত্তের নিকট সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেওয়ার জন্য বলেন। মন্ত্রী শ্রীরায় আরও উৎসাহিত হয়ে বলেন যে ঘর নির্মাণের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে পাঁচ লক্ষ টাকা দেবেন। মন্ত্রীর এই ঘোষণা আমাদের কাছে মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতো মনে হয়েছিল।
আজ দশ বৎসর পর মন্ত্রী গৌতম রায়ের সঙ্গে সেদিনের সাক্ষাৎকার এক সুদুরপ্রসারী ঘটনা বলে মনে হয়। কারণ সেদিনের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়েই বঙ্গভবন নির্মাণের কাজে মন্ত্রী গৌতম রায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর সাহায্য ছাড়াও বঙ্গভবন অবশ্যই হত কিন্তু সেদিনের পর বঙ্গভবনের প্রথম অংশের নির্মাণ এবং বর্তমান ভবনের সম্প্রসারিত অংশের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে তা হয়তো আমাদের পক্ষে স্বপ্নই থেকে যেতো।
ফিরে আসি ভবন নির্মাণর জন্য জমি বণ্টনের কথায়। ২০০৪ সনের অক্টোবর মাসে মৃদুল মজুমদার ভূমি বণ্টনের জমির বণ্টন পত্র সম্পাদকের হাতে তুলে দেন। জেলা সমিতির পক্ষ থেকে ডিসি কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে ২ সেপ্টেম্বর এক চিঠিযোগে উপায়ুক্ত শ্রীমতী সুনন্দা সেনগুপ্ত কাছাড় জেলার ভূ-বাসন আধিকারিককে জমির দখল সমঝে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেই অনুসারে সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ তারিখে প্রদত্ত পাঁচ কাঠা জমির সীমানা সহ দখল সমঝে দিয়ে জমি হস্তান্তরের প্রমাণপত্র দেওয়া হয়।
জমি পাওয়ার পরও আমাদের উৎসাহ শেষ হয়নি। তারপর ৩০/১১/২০০৪-এ উপায়ুক্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে একখানা চিঠি দেওয়া হয় এবং সেই চিঠিতে সম্মেলনের প্রয়োজনীয় অডিটোরিয়াম, আর্কাইভ, লাইব্রেরি, কনফারেন্স হল, প্রকাশনা কেন্দ্র, অতিথি ভবন, আর্ট গ্যালারি ইত্যাদি গড়ে তোলার জন্য প্রাপ্ত জমি সংলগ্ন আরও পাঁচ কাঠা জমির জন্য আবেদন জানানো হয়। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে উপায়ুক্ত ভুবাসন আধিকারিকের নিকট প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান এবং মহকুমা ভূমি বণ্টন কমিটির অনুমোদন নিয়ে যথারীতি সম্মেলনের নামে এর সুপারিশ করে রাজ্য সরকারের নিকট পাঠান। অতিরিক্ত ভূমি অনুমোদন ২০০৫ সনের ডিসেম্বর মাসে উপায়ুক্তের নিকট আসে এবং উপাযুক্তের নির্দেশ মত ২০ ডিসেম্বর ভুবাসন আধিকারিকের পক্ষে সরকার অনুমোদিত চার কাঠা জমির দখল প্রমাণপত্র সহ আমাদের সমঝে দেওয়া হয়। এখানেও একটি কথা অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে দ্বিতীয় কিস্তির চার কাঠা জমি সরকার কর্তৃক বণ্টনের সময় গৌতম রায় রাজস্ববিভাগের মন্ত্রীত্বের দায়িত্বে ছিলেন। নতুন নিয়ম অনুসারে শহরাঞ্চলে জমি আবণ্টনে মন্ত্রীসভার অনুমোদন বাধ্যতামূলক ছিল। এবারও আমাদের জমি পাবার জন্য দিসপুর সচিবালয়ে যেতে হয়নি।
আবার ভবন নির্মাণের অর্থের কথায় ফিরে আসি। যেহেতু সম্মেলনের নিজস্ব কোনও জমি ছিল না তাই ভবন নির্মাণের তহবিলের প্রশ্ন এতদিন উঠেনি। যদিও তখন জেলা সমিতির সদস্য সংখ্যা পাঁচশতের কাছাকাছি ছিল, দ্বিবার্ষিক সদস্য চাঁদা মাত্র কুড়ি টাকা ছিল বলে সঞ্চয়েরও কোনও সুযোগ ছিল না। ১৯৯১ এবং ১৯৯৪ সালে শিলচরে যথাক্রমে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের একাদশ ও চতুর্দশ অধিবেশনের উদ্ধৃত্ত এক লক্ষ ছেষট্টি হাজার টাকার উপর নির্ভর করে আমরা অগ্রসর হই। ইতিমধ্যে আসামের আবগারি মন্ত্রী গৌতম রায় ছয় লক্ষ, কেন্দ্রীয় ভারীশিল্প মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব পাঁচ লক্ষ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঁশিয়ার পক্ষে শ্রীমতী সুস্মিতা দেব পাঁচ লক্ষ, সোনাই বিধানসভার তৎকালীন বিধায়ক কুতুব আহমেদ মজুমদারের নিকট থেকে পঁচিশ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট যোলো লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা আমাদের হাতে আসে। উপরোক্ত অর্থ একদিনে আসেনি। প্রায় এক বৎসর সময়কালের মধ্যে এসেছিল।
সম্মেলনের কার্যকরী সমিতির ৩০/১০/২০০৫ তারিখের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০৫ সনের ৭ ডিসেম্বর তারিখে শিলান্যাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা সমিতির সদস্য এবং বিশিষ্টজনদের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব ও আসামের রাজস্ব ও আবগারি মন্ত্রী গৌতম রায় ও আরও বিশিষ্টজনেরা। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মন্ত্রী শ্রীরায় বলেন যে সদরঘাট সেতু পেরিয়ে শহরে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে বাঙালিদের এই স্মারক ভবন। তাই এটি হওয়া চাই সবদিক থেকে দর্শনীয়।
ভবন নির্মাণের নকশা ও এস্টিমেট তৈরি করেন এনআইটির অধ্যাপক অসীম দে। মোট ৬ টি পিলার সম্মিলিত প্রায় ১১০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনের কাজ শুরু হয়। প্রাপ্ত জমিতে ব্রিটিশ আমলের শতাধিক বৎসরের পুরানো পুকুর থাকাতে পাম্প লাগিয়ে জল নিষ্কাশন ও বহু ট্রাক মাটি ফেলে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। পুকুরের পাড় সংলগ্ন সম্মিলিত জমি ভরাট করে বাঁশ ও টিনের চাল দিয়ে একটি অস্থায়ী গৃহ কাজের সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ছোটোখাটো বৈঠকও এই গৃহে অনুষ্ঠিত হয়। নির্মাণ সমিতির পক্ষে নির্মাণের কাজ পরিচালনার জন্য শান্তনু দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি নিজ কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও ভবন নির্মাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নির্মাণ কাজ চলাকালীন সদস্যদের অনেকেই প্রত্যেকদিনই উপস্থিত হতেন। প্রায় ছয় সাত মাসের মধ্যে পাইলিং করে পিলার বসানোর ও টাইবিমের কাজ সম্পন্ন হয়। এতবড় কাজের দায়িত্বে ভয়েরও কারণ থাকে তাই কাজ চলাকালীন শহরের বিশিষ্টজনকে সুযোগমত এনে কাজ দেখানো হয়েছে। তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতাম এটা Social Audit। বিশিষ্টজনের মধ্যে দীপক ভট্টাচার্য, বাদল দে, ভক্তিমাধব চট্টোপাধ্যায় ও পরিমল শুরুবৈদ্যের নাম মনে আছে। ভবন নির্মাণের কাছ অগ্রসর হওয়ার পর দেখা গেল নির্মাণ কাজ সারাক্ষণ তদারকির প্রয়োজন আছে। যেহেতু সমিতি নিজেদের দায়িত্বেই কাজ চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জেলা সমিতির সিদ্ধান্তমতে তাই কাজের দায়িত্ব সমিতির সম্পাদক প্রদীপ আচার্যকে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর সমিতির পুরনো সদস্য বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যকে নির্মাণ উপসমিতির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাজ চলাকালীন এনআইটির অধ্যাপক অসীম দে প্রয়োজনীয় উপদেশ প্রদান করেছেন। কিছুদিন পর আমার সহপাঠী ইঞ্জিনিয়ার শিলচর পলিটেকনিকের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রণব কুমার দাসকে অনুরোধ করাতে তিনি নিয়মিত দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অসীম দে ও প্রণব কুমার দাস তাঁদের মূল্যবান সময় এই কাজে ব্যয় করেন। একটি কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে এই কাজের জন্য তাঁরা কোনও পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ভবন নির্মাণের সংগৃহীত অর্থ থেকে এক টাকাও নির্মাণ কাজের বাইরে অন্যভাবে খরচ করা হয়নি এবং কোনও সদস্যই দায়িত্ব পালনের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেননি।
জমি প্রাপ্তি ও ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কত দৌড়ঝাঁপ ও পরিশ্রম করতে হয়েছে তা ভাবলে নিজেরই অবিশ্বাস হয়। ভবন নির্মাণের কাজ চলাকালীন মন্ত্রী গৌতম রায় সুযোগ মত নির্মাণস্থলে আসতেন এবং কাজের অগ্রগতি দেখে পরামর্শাদি দিতেন। হঠাৎ একদিন মন্ত্রীর নজরে আসে বঙ্গভবনের জন্য প্রদত্ত ভূমির উত্তরদিকে P. W.D. রাস্তা সংলগ্ন ঘরগুলি। প্রশ্নের উত্তরে যখন বলা হল যে ঘরগুলো উপায়ুক্তের কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের, তখনই তিনি বললেন যে এই ঘরগুলোকে স্থানান্তরিত করতে হবে। তারপর যখনই তিনি বঙ্গভবনে এসেছেন তখনই কাছাড়ের উপায়ুক্ত গৌতম গাঙ্গুলি মহাশয়কে ডেকে এনে ঘরগুলো সরানোর ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন। এরপর শুরু হয় আমাদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে উপায়ুক্তকে চিঠি মারফত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ এবং উপায়ুক্তেরর পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান। অবশেষে সরকারের টাউন এন্ড কান্ট্রি প্লানিং বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম কিস্তির চার লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয় এবং ওই বিভাগেরই তত্ত্বাবধানে অফিস পাড়ার ডাকবাংলোর পেছনে ঘরগুলো নতুনভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়।
এতসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আরও যেসব কাজের কথা মনে পড়ে তা মোটামুটি নিম্নরূপ:-
ভবন নির্মাণের অনুমতির জন্য নকশাদি দিয়ে শিলচর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন দাখিল। শিলচর পৌরসভার চেয়ারম্যানের নিকট বঙ্গভবনের হোল্ডিং নম্বর দেওয়ার আবেদন ও পৌরসভা কর্তৃক আদায়কৃত ট্যাক্স মকুব করা এবং বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য পৌরসভার No objection সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা। প্রায় একই সাথে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ থেকে পানীয়জল সংযোগের জন্য পৌরসভার নিকট আবেদন জানানো হয়। কিছুদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ ও নলবাহিত জলসংযোগের কাজ সম্পন্ন হয়। নতুন ভবনের অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ আমাদের সমিতির প্রবীণ সদস্য রন্টু বাগচীর তত্ত্বাবধানে অতি সুন্দরভাবে যথাসময়ে সম্পন্ন হয়। মন্ত্রী গৌতম রায় মহাশয়ের পরামর্শে বঙ্গভবন সম্প্রসারণের জন্য Untide Fund থেকে অর্থ বরাদ্দের জন্য আমাদের হাতে প্রস্তুত থাকা এক কোটি তেত্রিশ লক্ষ চুয়ান্ন হাজার টাকার একটি Plan estimate উপায়ুক্তের নিকট দাখিল করা হয়। Plan estimateটি তৈরি করেন পলিটেকনিকের অধ্যাপক প্রণব কুমার দাসের ছাত্র সুরজিত নন্দী। পরবর্তীতে বঙ্গ সাহিত্যের পক্ষ থেকে আসামের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকে (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ) পত্রযোগে অর্থ বরাদ্দের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।
এবার আসি ভবনের নামকরণ নিয়ে। কার্যকরী সমিতির ২০০৮ সনের ৬ জুলাই তারিখের সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কেউ প্রস্তাব করেন 'শহীদ স্মৃতি ভবন' আবার কেউ প্রস্তাব করেন ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নাম রাখা হউক 'উনিশে'। সম্পাদক প্রস্তাব করেন 'বঙ্গভবন' যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
প্রাপ্ত জমিতে গভীর পুকুর থাকায় সেটা ভরাট করা সমিতির এক চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। শিলচর পৌরসভার সঙ্গে আলোচনাক্রমে পৌরসভা কর্তৃক খনন করা বিভিন্ন নর্দমার মাটি বেশ কিছুদিন ধরে ফেলা হল। বর্তমান শিলচর আঞ্চলিক সমিতির সহ সভাপতি পরিতোষ দে ও তৎকালীন জেলা সম্পাদক প্রদীপ আচার্য অনেক রাত পর্যন্ত উপস্থিত থেকে মাটি ফেলার কাজে তদারকি করেন।
ভবন নির্মাণের কাজে আর যেসব সংস্থা ও ব্যক্তির নিকট থেকে সমিতি সাহায্য পেয়েছে তাদের নাম উল্লেখ না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। উপায়ুক্তের রাজস্ববিভাগ, ভূবাসন আধিকারিকের কার্যালয় শিলচর পৌরসভা, শিলচর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী, বীথিকা দেব, সুজন দত্ত, অসীম দে, মৃদুল মজুমদার, রাহুল দাশগুপ্ত, প্রণব কুমার দাস, সুরজিত নন্দী এবং আরও অনেকে। ভবন নির্মাণ চলাকালীন সময়ে পূর্বাপর যথারীতি শিলচর নরসিং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ও ডিএনএনকে বালিকা বিদ্যালয়ের গৃহ আমাদের প্রস্তুতিপর্বের সভা ও অনুষ্ঠানাদির অনুমতি দেওয়ার জন্য সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞ। অবশেষে কার্যকরী সমিতির ২৭/৭/০৮ তারিখে সভায় উদ্বোধনের দিন সাব্যস্ত হয় পরের মাসের ৩ তারিখ রবিবার। নতুন ভবনের পূর্বদিকে যে খালি জায়গা ছিল সেখানে এবং তারও পূর্বদিকে ছোট রাস্তা এবং পৌরসভার পাশে যে মিষ্টির দোকান সেই অংশে মঞ্চ এবং প্যান্ডেল বানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় চক্কেশ্বরী ভাণ্ডারের মালিক জয় বরদিয়াকে। সেই সভায় নতুন ভবনের উদ্বোধক, প্রধান অতিথি, বঙ্গভবন সম্পর্কীয় প্রতিবেদন পাঠ, অনুষ্ঠানের সভাপতি, অনুষ্ঠানের ঘোষক এবং সভাশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন কে করবেন এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাছাড় জেলার সকল আঞ্চলিকের সদস্যদের এবং করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির জেলা সমিতিকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো স্থির হয়। অনুষ্ঠানে সবাইকে জলযোগে আপ্যায়ন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কার্যকরী সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতি দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস, সম্পাদক প্রদীপ আচার্য, কেন্দ্রীয় সমিতির সহসভাপতি সুজিত ভট্টাচার্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক বিনোদ বিহারী দেবনাথ সহ শ্যামলকান্তি দেব, তৈমুর রাজা চৌধুরী, শান্তনু দাস, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, অনিল পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন এই নতুন ভবন বরাক উপত্যকার বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠীর শিল্প সাহিত্য তথা সংস্কৃতির বিকাশে এক নতুন দিশা দেবে। উপস্থিত সাংবাদিকগণকে কর্মকর্তারা আরও জানান যে এই ভবনটি পরবর্তীকালে সম্প্রসারিত করে তৈরি করা হবে ও তাতে থাকবে সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি, প্রেক্ষাগৃহ, আর্ট গ্যালারি ইত্যাদি। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
উদ্বোধনের আগের দিনই বঙ্গভবন প্রাঙ্গণ সুন্দর সাজে সেজে ওঠে এবং সব সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরের দিন অর্থাৎ ৩রা আগস্ট ২০০৮ সন (১৮ শ্রাবণ ১৪১৫ বঙ্গাব্দ) রবিবার বেলা ১০টায় অব্যবহিত পর থেকেই সম্মানিত অতিথিগণ এসে উপস্থিত হতে থাকেন। আনন্দমুখর পরিবেশের মধ্যে ফিতা কেটে নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব এবং ভবনের ভিতরেই সুন্দরভাবে স্থাপন করা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন আসামের মন্ত্রী গৌতম রায়। নতুন ভবনটি সকল অভ্যাগতের প্রশংসা অর্জন করতে সমর্থ হয়। এর পরই সভার কাজ শুরুর ঘোষণা করেন ঘোষক সব্যসাচী পুরকায়স্থ। একে একে অভ্যাগতদের সমাদর সহকারে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। মঞ্চে আসন অলংকৃত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব, রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম রায়, করিমগঞ্জের সাংসদ ললিতমোহন শুক্লবৈদ্য, প্রাক্তন সাংসদ কমলেন্দু ভট্টাচার্য, উপায়ুক্তের প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপায়ুক্ত এইচ. এন. লস্কর, পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে প্রয়াত) সুদীপ দত্ত, আঁশিয়ার চেয়ারপার্সন শ্রীমতী সুস্মিতা দেব ও জেলাশাসক গৌতম গাঙ্গুলী জায়া সঞ্চিতা গাঙ্গুলী, কাছাড় জেলার পুলিশ সুপার ভায়োলেট বরুয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে প্রয়াত শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী ও তরুণ দাস, সম্মেলনের জ্যেষ্ঠ সদস্য অনন্ত দেব, জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুজিত ভট্টাচার্য, জেলা সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস ও প্রদীপ আচার্য। সভায় সভাপতিত্ব করেন দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস। একে একে মঞ্চে উপবিষ্ট সকল সম্মানিত অভ্যাগতদের উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করা হয়। এরপর উদ্বোধনী সঙ্গীত সৌরীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পরিবেশন করেন কাছাড় জেলা সমিতির শিল্পীবৃন্দ। যতদূর মনে পড়ে শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন সৌরীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, লুৎফা আরা চৌধুরী, বাপী রায়, তাপসী বণিক, সত্যরঞ্জন রায়, গৌরব বণিক, শুভদীপ আচার্য, গৌরী শুক্লবৈদ্য, মনোজিত দত্ত ও সঞ্জয় দেব।
সভার শুরুতে সম্পাদক আচার্য স্বাগত ভাষণ দেন। তারপর উদ্বোধক সন্তোষমোহন দেব তাঁর ভাষণে বলেন কোনও ভাষা কারো উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এই অঞ্চলের মানুষ তা প্রমাণ করেছেন। বরাক ও ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে সমন্বয়ের সোপান গড়ে তোলারও তিনি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গৌতম রায় বলেন এই ভবন আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। এটা না করে দেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতিকে তিনি দায়ী করে দোষ নিজের ঘাড়েও টেনে নেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন শিলচরের এই বঙ্গভবন ভবিষ্যতে বাঙালিদের গর্বের কারণ হবে। বঙ্গভবনের নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ উচ্চমানের হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। সাংসদ ললিতমোহন শুক্লবৈদ্য বলেন মন্ত্রী গৌতম রায় স্বপ্নদর্শী। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী, তরুণ দাস, ভায়োলেট বরুয়া, সুদীপ দত্ত, হোসেন আহমেদ লস্কর। অনুষ্ঠানের সভাপতি দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস বরাক উপত্যকায় যে চোরাগুপ্তাভাবে ভাষিক আগ্রাসন চলছে সে সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে দেন। সভাপতির ভাষণের পর ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন তৈমুর রাজা চৌধুরী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্যেই বঙ্গভবন গড়ে তোলার কাজ থেমে থাকেনি। গৃহস্থ বাড়ির মতো উঠান ও সীমানাজুড়ে বাঁশের ফেন্সিং দেওয়া, নথিপত্র সংরক্ষণের জন্য প্রয়াত দেবেন্দ্রশংকর দত্ত ও প্রয়াত অনিল ওরফে কার্তিক বিশ্বাস মহাশয়ের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দান হিসাবে আলমারি গ্রহণ, শিলচর শহরের প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কে চেয়ার, টেবিল, আলমারি ইত্যাদি সামগ্রী সাহায্য হিসাবে পাওয়ার আবেদন, এমনকি Goodrick Tea Company যাদের কাছাড় জেলায় চা বাগান আছে তাদের কলকাতার কার্যালয়ের সাথে বঙ্গভবনে লাইব্রেরি গড়ে তোলার জন্য সাহায্যপ্রার্থী হয়ে চেষ্টা করা হয়েছে। তারপর বঙ্গভবনের সম্মুখভাগের নয় কাঠা খাস জমি পাওয়ার জন্য আবেদন এবং সেই আবেদন ২০০৯ সনের ১২ নভেম্বর তারিখে মহকুমা ভূমি বণ্টন কমিটির অনুমোদনসহ জেলা উপায়ুক্তের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট প্রস্তাব পাঠানোর ব্যাপারে অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
বঙ্গভবনের প্রথম পর্যায়ের কাজের বিবরণ শেষ হল। পরবর্তী পর্ব হল আরেক ইতিহাস। সে ইতিহাস তো এ ক্ষুদ্র পরিসরে ধরা সম্ভব নয়। এ কাজটুকু সম্মেলনের অন্য সহযোগীর হাতেই থাকুক এবং এ স্মারক পত্রিকায়ই তা লিপিবদ্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস।