ত্রিস্তরীয় সংগঠন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি বঙ্গভবনে একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে। গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের দুই বিশিষ্ট পণ্ডিত জগদীশ ভট্টাচার্য ও দেবীপদ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত সংগ্রহের সমস্ত বই। তাঁদের উত্তরসূরীরা উত্তর-পূর্ব ভারতের নবীন গবেষকদের প্রয়োজনের কথা মনে রেখে এই অমূল্য সম্পদ বঙ্গভবন গ্রন্থাগারে দান করেছেন।
জগদীশ ভট্টাচার্য ছিলেন কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের বাংলার অধ্যাপক। পরবর্তী সময়ে তিনি বঙ্গবাসী কলেজ অব কমার্সের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। রবীন্দ্র সমালোচনার অঙ্গনে জগদীশ ভট্টাচার্যের অবদান অসামান্য। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল ‘কবিমানসী’ (দুই খণ্ড), ‘রবীন্দ্র কবিতা শতক’ (চার খণ্ড), ‘রবীন্দ্রনাথ ও সজনীকান্ত’। তাঁর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘আমার কালের কয়েকজন কবি’, ‘আমার কালের কয়েকজন কথাশিল্পী’, ‘ভারতশিল্পী তারাশঙ্কর’, ‘বন্দেমাতরম’ ইত্যাদি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা সমস্ত ছোটগল্প তাঁর সম্পাদনায় তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একটানা সতেরো বছর সম্পাদনা করেছেন কবিতা বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘কবি ও কবিতা’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, সমরেশ বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিকরা তাদের অনেক বই নিজের হাতে লিখে জগদীশ ভট্টাচার্যকে উপহার দিয়েছিলেন। এসব স্বাক্ষরিত এই বঙ্গভবন গ্রন্থাগারের অমূল্য সম্পদ।
দেবীপদ ভট্টাচার্য দুই দফায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। তাঁর মৌলিক রচনাগুলি হল- ‘উপন্যাসের কথা’, ‘রবীন্দ্রচর্যা’, ‘বাংলাচরিত সাহিত্য’, ‘উত্তরকাল ও শরৎচন্দ্র’ ইত্যাদি। দেবীপদ ভট্টাচার্য গ্রন্থ সম্পাদনাও করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘রেভারেণ্ড লালবিহারী দে ও চন্দ্রমুখীর উপাখ্যান’, মীর মশাররফ হোসেনের- ‘আমার জীবনী’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য সম্পাদিত গ্রন্থ।
শুধু সাহিত্য নয়- এই দুই পণ্ডিতের সংগ্রহে ছিল দর্শন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, সংস্কৃতশাস্ত্র বিষয়ক বই ও অনেক পত্রপত্রিকা।
এসব বই ও পত্রিকার অনেকগুলিই এখন দুষ্প্রাপ্য।