বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

সম্মেলন-এর কাছাড় জেলা সমিতি কর্তৃক পরিচালিত দুষ্প্রাপ্য বইয়ের গ্রন্থাগার।

শঙ্খের মধ্যে যেমন সমুদ্রের শব্দ শুনা যায় তেমনি এই লাইব্রেরির মধ্যে কি হৃদয়ের উত্থান-পতনের শব্দ শুনিতেছ? এখানে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির হৃদয় পাশাপাশি এক পাড়ায় বাস করিতেছে। বাদ ও প্রতিবাদ এখানে দুই ভাইয়ের মতো একসঙ্গ থাকে। সংশয় ও বিশ্বাস, সন্ধান ও আবিষ্কার এখানে দেহে দেহে লগ্ন হইয়া বাস করে। এখানে দীর্ঘপ্রাণ ও স্বল্পপ্রাণ পরম ধৈর্য ও শান্তির সহিত জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতেছে, কেহ কাহাকেও উপেক্ষা করিতেছে না।
কত নদী সমুদ্র পর্বত উল্লঙ্ঘন করিয়া মানবের কণ্ঠ এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে কত শত বৎসরের প্রান্ত হইতে এই স্বর আসিতেছে। এসো এখানে এসো, এখানে আলোকের জন্ম সংগীত গান হইতেছে।
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,লাইব্রেরী, "বিচিত্র প্রবন্ধ"।

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

ত্রিস্তরীয় সংগঠন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি বঙ্গভবনে একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে। গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের দুই বিশিষ্ট পণ্ডিত জগদীশ ভট্টাচার্য ও দেবীপদ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত সংগ্রহের সমস্ত বই। তাঁদের উত্তরসূরীরা উত্তর-পূর্ব ভারতের নবীন গবেষকদের প্রয়োজনের কথা মনে রেখে এই অমূল্য সম্পদ বঙ্গভবন গ্রন্থাগারে দান করেছেন।
জগদীশ ভট্টাচার্য ছিলেন কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের বাংলার অধ্যাপক। পরবর্তী সময়ে তিনি বঙ্গবাসী কলেজ অব কমার্সের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। রবীন্দ্র সমালোচনার অঙ্গনে জগদীশ ভট্টাচার্যের অবদান অসামান্য। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল ‘কবিমানসী’ (দুই খণ্ড), ‘রবীন্দ্র কবিতা শতক’ (চার খণ্ড), ‘রবীন্দ্রনাথ ও সজনীকান্ত’। তাঁর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘আমার কালের কয়েকজন কবি’, ‘আমার কালের কয়েকজন কথাশিল্পী’, ‘ভারতশিল্পী তারাশঙ্কর’, ‘বন্দেমাতরম’ ইত্যাদি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা সমস্ত ছোটগল্প তাঁর সম্পাদনায় তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একটানা সতেরো বছর সম্পাদনা করেছেন কবিতা বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘কবি ও কবিতা’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, সমরেশ বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিকরা তাদের অনেক বই নিজের হাতে লিখে জগদীশ ভট্টাচার্যকে উপহার দিয়েছিলেন। এসব স্বাক্ষরিত এই বঙ্গভবন গ্রন্থাগারের অমূল্য সম্পদ।
দেবীপদ ভট্টাচার্য দুই দফায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। তাঁর মৌলিক রচনাগুলি হল- ‘উপন্যাসের কথা’, ‘রবীন্দ্রচর্যা’, ‘বাংলাচরিত সাহিত্য’, ‘উত্তরকাল ও শরৎচন্দ্র’ ইত্যাদি। দেবীপদ ভট্টাচার্য গ্রন্থ সম্পাদনাও করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘রেভারেণ্ড লালবিহারী দে ও চন্দ্রমুখীর উপাখ্যান’, মীর মশাররফ হোসেনের- ‘আমার জীবনী’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য সম্পাদিত গ্রন্থ।
শুধু সাহিত্য নয়- এই দুই পণ্ডিতের সংগ্রহে ছিল দর্শন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, সংস্কৃতশাস্ত্র বিষয়ক বই ও অনেক পত্রপত্রিকা।
এসব বই ও পত্রিকার অনেকগুলিই এখন দুষ্প্রাপ্য।
আরও

ভাষা শহিদ স্মৃতি মহাফেজখানা

বঙ্গভবনের দ্বিতলে স্থাপিত এই গ্রন্থাগারের সঙ্গেই রয়েছে ‘ভাষা শহিদ স্মৃতি মহাফেজখানা’। এতে সংগৃহীত হচ্ছে মূলত বরাক উপত্যকা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বই এবং এই অঞ্চল সম্পর্কিত নানা নথিপত্র। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বিশ্বনাথ রায় মহাফেজখানা উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্যে সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরীর হাতে মহাফেজখানার জন্য তুলে দিয়েছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০টি ও শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ১৩টি চিঠি। ৫ মে ২০১১ খ্রিঃ তারিখে তিনি আবার অন্নদাশঙ্কর রায়ের ৬টি চিঠি উপহার দিয়েছেন।
বিগত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখে এই গ্রন্থাগারের অন্তর্গত মহাফেজখানার দ্বারোদ্ঘাটন করেছেন জগদীশ ভট্টাচার্যের পুত্র অধ্যাপক রঞ্জন ভট্টাচার্য ও দেবীপদ ভট্টাচার্যের পুত্র শুভায়ু ভট্টাচার্য।
এ ধরনের আরও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
আরও

নিয়মাবলী

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার আপাতত সপ্তাহে চারদিন - রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি ও শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
গ্রন্থাগার থেকে কোনও বই বাইরে নেওয়া যাবে না।
পাঠকক্ষে বসে পড়া-লেখা করতে হবে।
গ্রন্থাগারের সদস্য চাঁদা ১০০.০০ (একশত) টাকা।
প্রতি একবছর পর সদস্যপদ নবীকরণ করতে হবে।
নবীকরণের চাঁদা ৫০.০০ (পঞ্চাশ টাকা)।
বঙ্গভবন গ্রন্থাগারের সদস্য হতে যারা ইচ্ছুক তাদের দুকপি স্টাম্প সাইজ ফটো সহ বঙ্গভবন অনুসন্ধান কেন্দ্রে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
আরও

পরিচালনা উপসমিতি

• উপদেষ্টা •
এ মাংলেম্বা সিংহ

এ মাংলেম্বা সিংহ

প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক,

কাছাড় কলেজ, শিলচর

সরিতা ভট্টাচার্য

সরিতা ভট্টাচার্য

গ্রন্থাগারিক,

উইমেন্স্ কলেজ, শিলচর

সোনালী চৌধুরী

সোনালী চৌধুরী

গ্রন্থাগারিক,

রাধামাধব কলেজ, শিলচর

সেহনারা বেগম চৌধুরী

সেহনারা বেগম চৌধুরী

গ্রন্থাগারিক,

গুরুচরণ কলেজ, শিলচর

• আহ্বায়ক •
অমলেন্দু ভট্টাচার্য

অমলেন্দু ভট্টাচার্য

আহ্বায়ক,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

সুপ্রদীপ দত্তরায়

সুপ্রদীপ দত্তরায়

সহ-আহ্বায়ক,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

• সদস্য •
দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস

দীনেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস

সদস্য,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

তৈমুর রাজা চৌধুরী

তৈমুর রাজা চৌধুরী

সদস্য,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

জয়ন্ত দেবরায়

জয়ন্ত দেবরায়

সদস্য,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

বিশ্বতোষ চৌধুরী

বিশ্বতোষ চৌধুরী

সদস্য,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

কার্যালয়

• গ্রন্থাগার সহকারী •
অঙ্কিতা চন্দ

অঙ্কিতা চন্দ

গ্রন্থাগার সহকারী,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

শর্মিলা পাল

শর্মিলা পাল

গ্রন্থাগার সহকারী,

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর

• যোগাযোগ •

বঙ্গভবন গ্রন্থাগার, শিলচর
বঙ্গভবন
অরুণকুমার চন্দ রোড,
সদরঘাট, শিলচর - ৭৮৮ ০০১
কাছাড়, আসাম