2017
report-2017-header
শ্রদ্ধাস্পদ সভাপতি ও সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ,

বরাক উপত্যকা বাদসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সাতাশতম দ্বিবার্ষিক কেন্দ্রীয় অধিবেশনে আয়োজিত ৩৭তম কেন্দ্রীয় বার্ষিক সাধারণ সভায় সমাগত আপনাদের প্রত্যেককে জানাই স্বাগত অভিবাদন, আন্তরিক প্রীতি ও নমস্কার।

সুধী,

চার দশক আগে এক সংকটময় সময়ে ভাষা আন্দোলনের ভাবধারায় উজ্জীবিত এই উপত্যকার দিগদর্শক চিন্তকদের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করেছিল বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। একদিকে আগ্রাসনের থাবা থেকে ভাষার অধিকারের সুরক্ষা, আঞ্চলিক পর্যায়ে ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশ, কলাক্ষেত্রের সমস্ত সৃজনশীল উদ্যমের প্রসারে উৎসাহ প্রদান, অন্যদিকে রাজনীতির কুটিলতার উপেক্ষিত, অবহেলিত এই অঞ্চলের আর্থিক স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলকে সংগঠিত করে উপত্যকার সার্বিক আত্মপরিচয় তুলে ধরতে বিগত দিনগুলোতে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে আসছে সম্মেলন। চল্লিশ বছরের এই পথচলা উপত্যকার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এই পথচলায় যাঁরা ছিলেন পথ প্রদর্শক, ধারা দিয়েছেন নেতৃত্ব সম্মেলনের চল্লিশতম বর্ষপূর্তিতে (১০৮০-১৪২৩ বঙ্গাব্দ / ১৯৭৭- ২০১৭ খ্রিঃ) সেইসব মহান ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

কালের যাত্রায় বহু পরীক্ষায় বেশকিছু ক্ষেত্রে সাফল্যের দাবিদার বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের এই ৩৭তম কেন্দ্রীয় বার্ষিক সাধারণ সভা ও সাতাশতম অধিবেশন এক বিপন্ন সময়ে বহু সংগ্রামের পীঠস্থান করিমগঞ্জ শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলার রাষ্ট্রসীমা থেকে নির্বাসিতা এই বরাকভূমিকে স্বাধীনতার উষালগ্ন থেকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। সংগ্রামের মরগানে না হেঁটে এই উপত্যকা কিছুই পায়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপেক্ষা, বঞ্চনা ও ষড়যন্ত্রের ফলে এই উপত্যকা আজ এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে। ভাষিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিকত্বের অধিকার এবং আর্থিক ক্ষেত্রে আমরা বাস্তবিক পক্ষেই একেবারে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছি। আমাদের ভাষিক ও জাতিগত পরিচয় ভুলিয়ে দিতে, বহু সংগ্রামের ফসল ভাষার অধিকার খর্ব করতে ক্ষমতার অলিন্দ থেকে নিত্য নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক বিকাশের দরজা বহু প্রতিশ্রুতির পরও অবরুদ্ধ। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্ন এখনও অধরা। নবীন প্রজন্মের রুটি-রুজির, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর অধিকার ছিনিয়ে নিতে প্রণালীবদ্ধ চেষ্টা চলছে। বিদেশি ইস্যুর পটভূমিতে "ডি" ভোটার সাজিয়ে হেনস্থার মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এন আর সি) নবায়নে 'ও আই' এবং 'এনও আই বিভাজন রেখা টেনে জনগণকে এক ভয়ংকর নিগ্রহের পথে ঠেলে দিতে পর্দার আড়ালে পায়তারা চলছে। নাগরিকত্ব সমস্যার জট খোলার কেন্দ্র সরকারের উদামও জটিলতার আবর্তে পড়ার অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা ক্রমশই বাড়ছে। এই কঠিন সময়ে সুচিন্তিত ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের উপরই আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।

নাগরিকত্বের জন্য সংগ্রাম

বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিতি তার বিগত দু বছরের কার্যকালে নাগরিকত্ব ইস্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সময়ের দাবি মেনে নাগরিক অধিকার রক্ষার লড়াইকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার নিয়েছে। এ নিয়ে তৎপরতা উপত্যকার ভেতরে সীমিত না রেখে রাজ্য রাজধানী গুয়াহাটি এবং জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি পর্যন্ত গিয়ে অধিকারের দাবি বলিষ্ঠ কণ্ঠে উত্থাপন করেছে। ২০১৫ সালের ১ জুলাই শিলচর, করিমগঞ্জ ৩ হাইলাকান্দিতে তিন জেলা শাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র পাঠিয়ে সম্মেলন বাঙালি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে আন্দোলনের সূচনা করেছিল। স্মারকপত্রে দেশভাগের বলি বা ধর্মীয় নয়তো সামাজিক উৎপীড়নে এ রাজ্যে আসা উচ্চাত্যদের নাগরিকত্ব সমস্যা নিরসনে প্রাক-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

তবে সম্মেলন মনে করে শুধুমাত্র দাবিপত্র পাঠিয়ে নিগ্রহ থেকে মুক্তি মিলবে না। সর্বভারতীয় স্তরে সম্মেলনের অভিমত জানিয়ে তার সপক্ষে জনমত গঠনেও নামা প্রয়োজন। এই ভাবনার একদিকে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের 'হিভাগ সেল'-এ 'অভিযোগনামা পাঠিয়ে (রেজিস্ট্রেশন নং পিএম ও পিজি/ই/২০১৫/১৬২২১১ এবং এম আই এম এইচ এ/ই/২০১৫ /০৩০৯৫) জানানো হয় নিগ্রহ মুক্তি ও সুরক্ষার আবেদন। অন্যদিকে ৩ আগস্ট, ২০১৫-এ শিলচর সফররত ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও আসামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রামমাধব, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মহেন্দ্র সিং, তৎকালীন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যের সঙ্গে শিলচর আবর্ত ভবনে, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬-এ রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা ও কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী আজাদ ও আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি অঞ্জন দত্তের সঙ্গে শিলচর কাছাড় ক্লাবে বৈঠকে বসে নাগরিকত্ব ইস্যূতে বাঙালির বিড়ম্বনার কথা সবিস্তারে জানানো হয়, আবেদন জানানো হয় দুর্দশা মোচনে দলীয় পর্যায়ে তারা যেন হস্তক্ষেপ করেন। উভয় ক্ষেত্রেই নেতারা সম্মেলনের প্রতিনিধি দলের বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শুনে দলীয় স্তরে বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে আশ্বাস দেন। এই তৎপরতার মধ্যেই ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫-এ কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী সুধমা স্বরাজ শিলচর সফরে এলে, ৩ জানুয়ারি ২০১৬-এ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং করিমগঞ্জ সফরে এলে তাঁদের হাতে স্মারকপত্র তুলে দিয়ে নাগরিকত্ব ইস্যুতে যন্ত্রণা ও হেনস্থার কথা জানিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর ২০১৫-এ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সি পি আই ও সি পি এমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি ও সীতারাম ইয়েচুরির কাছে সম্মেলনের তরফে চিঠি পাঠিয়ে বাঙালির দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে সতর্ক করে বলা হয়, আসামের রাজনীতি তার মানবিক মুখ হারিয়ে ফেলছে, বিশ্বাস ভঙ্গ হচ্ছে বিপন্ন বাঙালির। ১ ডিসেম্বর, ২০১৬-এ নয়াদিল্লির ১১ অশোকা রোডের বিজেপি সভাপতির দপ্তর থেকে চিঠির প্রাপ্তি জানিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয় দলীয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সম্মেলন লক্ষ্য করে শুধু সর্বভারতীয় স্তরের নেতৃবৃন্দ নন, ইস্যুটি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিকদের নিয়ে জনমত গঠন করে বিধানসভা এবং লোকসভার ভেতরে-বাইরে সরব আওয়াজ তুলতে না পারলে নাগরিকত্বের প্রশ্নে বহুমুখীন নিগ্রহ ও বিড়ম্বনার অবসান হবে না। এই চিন্তা মাথায় রেখে শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি সহ উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক নাগরিক সভা পর্যায়ক্রমে আয়োজন করা হয়। আইনজীবীদের নিয়েও বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ২৩ আগস্ট, ২০১৫-এ শিলচর বঙ্গভবনে উপতাকার দুই বর্তমান সাংসদ, প্রাক্তন সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী, তৎকালীন মন্ত্রী, বিধায়ক ও রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা নেতাদের নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক। সেখানে সম্মেলনের তরফে নেতৃবৃন্দকে বলা হয়, এন আর সি নবায়ন ও নাগরিকত্ব ইস্যুকে সামনে রেখে ক্রমাগত বিদেশি নোটিশ, যাকে তাকে "ডি" ভোটায় সাজানো এবং টাইবুনালে প্রায় একতরফা রায়ে ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে বিপন্ন বাঙালিকে জেলে পাঠিয়ে দণ্ডিত অপরাধীনের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করে চরম অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তাই দলীয় রাজনীতির ঊর্দ্ধে উঠে উপত্যকার নেতৃবৃন্দকে সম্ভাব্য সব স্তরে সোচ্চার হওয়া দরকার। বৈঠকে সবাই সহমত ব্যক্ত করলেও পরবর্তী পর্যায়ে এককভাবে কিছু ব্যতিক্রমী তৎপরতা দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে সম্মেলন হাল ছাড়েনি, জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। একই সময়ে এন আর সির ফরম ও পরবর্তী সময়ে বংশবৃদ্ধের তালিকা পূরণে বিপন্ন মানুষগুলোকে সীমিত ক্ষমতায় যতটুকু সম্ভব সহায়তা প্রদানে পাশে দাঁড়িয়েছে সম্মেলন।

নাগরিকত্বের সমস্যা নিরসনে প্রবল জনমতের চাপে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫-এ বিজ্ঞপ্তি জারী করে ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে যারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত ভারতে এসেছেন তাদের আশ্রয়দানের সরকারি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে। বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে একে নাগরিকত্বের জট খুলতে এক সদর্থক পদক্ষেপ বলে অভিমত পোষণ করে। সম্মেলনের এই অভিমত প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলা হয়, শুধুমাত্র বিজ্ঞপ্তি জারী করলেই আসামের মতো রাজ্যে বাঙালির সুরক্ষা পাওয়া অলীক স্বপ্ন। তাই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সংসদে একটি পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব বিল উত্থাপন জরুরি হয়ে উঠেছে।

যৌথ সংসদীয় কমিটির শুনানিতে সম্মেলন।

পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব বিলের দাবি জানিয়ে সম্মেলন বসে থাকেনি, এর সপক্ষে জনমত গঠনে বিভিন্নভাবে তৎপরতাকে কেন্দ্রীভূত করেছিল। প্রতিশ্রুতি মিলেছিল কেন্দ্র সরকার পীড়িত বাঙালি ও অন্যান্যদের স্বস্তি দিতে শীঘ্রই সংসদে উত্থাপন করবে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল। সেপ্টেম্বর, ২০১৫ থেকে প্রতীক্ষার অবসান ঘটল দশ মাস ন'দিন পর। ১৫ জুলাই, ২০১৬-এ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে চেয়ে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ লোকসভায় উত্থাপন করেন। সম্মেলন কেন্দ্রীয় সরকারের বিল উত্থাপনের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানালেও আসামের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিলটি কতটুকু কার্যকর হবে সে নিয়ে সব মহলকে পর্যালোচনার আহ্বান জানায়।

ইতিমধ্যে বিলটি নিয়ে সংসদে মৃতানৈক্য দেখা দিলে এ সম্পর্কে পর্যালোচনা করে সরকারকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য লোকসভা ও রাজ্যসভার ৩০ জন সাংসদকে নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। বাগপথের সাংসদ ড. সত্যপাল সিং নেতৃত্বাধীন এই যৌথ সংসদীয় কমিটি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬-র মধ্যে বিলটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সব মহলের অভিমত আহ্বান করলে সম্মেলনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্পষ্টভাষায় জানানো হয় দেশভাগের বলি ধর্মীয় পীড়নে বিপন্ন বাঙালি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোক যারা ভারতের বর্তমান এলাকার এসেছেন তারা কোনওভাবেই বিদেশি মন, তারা অখণ্ড ভারতেরই বাসিন্দা। কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব সমস্যার জট খুলতে লোকসভায় যে বিল আনা হয়েছে তাতে তাদের নাগরিকত্ব কীভাবে প্রদান করা হবে সে নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। তাছাড়া ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ৬(ক) এবং বিধি ৪(ক) ২০০৩ যা ২০০৯ সালে সংশোধিত হয় আসামের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব প্রদানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাবি জানানো হয়, ভোটার তালিকা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নথিকে নাগরিকত্ব দাবির ক্ষেত্রে বৈধ নথি হিসেবে গণ্য করতে হবে।

যৌথ সংসদীয় কমিটি (জে পি সি) নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তাদের প্রতিবেদন তৈরির জন্য শুনানির সিদ্ধান্ত নিলে বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের তরফেও সময় চাওয়া হয়। এরপরই ২৫ অক্টোবর, ২০১৬-এ নয়াদিল্লির সংসদ ভবনে হাজির হবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্দিষ্ট দিনে শুনানিতে হাজির হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্মেলনের অভিমত তুলে ধরেন। জে পি সিকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়, সম্মেলন লোকসভায় উত্থাপিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬-কে সমর্থন করছে। তবে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি যাতে দীর্ঘদিন ঝুলে না থাকে এবং ভবিষ্যতে যাতে আইনী বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় সে নিশ্চয়তা পেতে ১) নাগরিকত্ব আবেদনের যোগ্যতা ছ'বছর থেকে কমিয়ে ছ'মাস ২) আইনী জটিলতা কাটাতে আবেদনেই নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সংস্থান নতুবা ৩) বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘু এদেশে এসেছেন তাদের সংবিধানের দ্বিতীয় খণ্ডের অনুচ্ছেদ ৬ অনুসারে 'ডীমড সিটিজেনস্ অ ইণ্ডিয়া' বলে গণ্য করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। প্রতিনিধিদল জে পি সি-র বিভিন্ন প্রশ্নের আইনী ব্যাখ্যা সঠিকভাবে নিতে পারায় প্রশংসিত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির দরবারে সম্মেলন

জে পি সি-র সামনে বক্তব্য পেশের পাশাপাশি ২৬ অক্টোবর, ২০১৩-এ সম্মেলনের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দরবারে গিয়ে বিদেশি সন্দেহে আসামের বিপন্ন বাংলাভাবীদের হেনস্থার কথা তুলে তাদের সুরক্ষার তাঁর হস্তক্ষেপ চান। বলা হয়, রাজ্যের প্রভুত্বকামী শক্তি ইতিহাস অস্বীকার করে বাঙালির পিঠে বিদেশি তকমা সেঁটে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ পথে ঠেলে দিয়েছে। লোকসভায় উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা এবং সাংবিধানিক বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব না থাকায় তা বাস্তবে দেশান্তরী বাঙালি উষান্তদের নাগরিকত্ব সমস্যার সমাধান করাতে পারবে না।

আসামে বালোতারীদের সরকারি সুবিধা প্রদানে কোনও ব্যবস্থা না নিয়েই ভাষিক সংখ্যালঘু কমিশনকে ভুল ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে রাজ্য সরকার কীভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সে চিত্রও রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন প্রতিনিধিগণ। একইসঙ্গে বিরাট সম্ভাবনাময় ব্যাক উপত্যকার এত বছরেও সাবলীল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি বলে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় রাষ্ট্রপতি শ্রী মুখোপাধ্যায় সম্মেলনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র ও আসাম সরকারকে বিহিত ব্যবস্থা নেবার জন্য লিখিতভাবে সুপারিশ করেন। দিল্লি সফরকালে সম্মেলনের প্রতিনিধিদল জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাঙালির বিপন্ন অবস্থার কথা জানান, যা পরবর্তী সময়ে রাজধানীর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

ভূমিপুত্র নির্ধারণে নয়া কৌশল

আসামে ভূমিপুত্র কারা এই সংজ্ঞা নির্ধারণের নামে 'আদি' ও 'অ-আদি' ('ও আই' ও 'এন ও আই') বাসিন্দা চিহ্নিত করার জন্য এন আর সি নবারনের হাত ধরে রাজ্যে নতুনভাবে উদ্যম শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে আসাম বিধানসভার পূর্বতন অধ্যক্ষ প্রণব গগৈ তার কার্যকালে এই বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক সরকারি পদক্ষেপ নেন। সম্মেলনের তরফে ২৪ মার্চ, ২০১৫-এ চিঠি লিখে তাকে স্পষ্টভাবে জানানো হয় বরাক উপত্যকার অভিমত না নিয়ে ভূমিপুত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হলে তার বিরোধিতা করবে এই অঞ্চলের মানুষ। এরপরই অধ্যক্ষ গগৈ ২১ মার্চ, ২০১৫-এ বিধানসভা ভবনে সম্মেলনকে সরকারি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলনের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে যোগ নিয়ে অধ্যক্ষ গগৈকে স্পষ্টভাষায় জানান, বাঙালি জনগোষ্ঠী যেহেতু অখণ্ড ভারতের বাসিন্দা ছিলেন তাই তারাও এ রাজ্যে ভূমিপুত্র। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে খারিজ করার চেষ্টা হলে তার পরিণতি হবে সুদুরপ্রসারী এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য নায়ী হবেন তারাই যারা এক্ষেত্রে একপেশে ভূমিকা নেবেন। সম্মেলন সেদিন বিধানসভা ভবনে অধ্যক্ষের কক্ষে জোরালো অভিমতই শুধু পেশ করেনি, ভূমিপুত্র নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি যাতে আর অগ্রসর না হ সেজন্য নিসপুরে তৎকালীন শাসক ও বিরোধী নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন।

এন আর সি নবায়নের প্রক্রিয়ায় ভূমিপুত্র নির্ধারণের জন্য যখন 'আদি' এবং 'অ-আদি বাসিন্দা বিভাজন রেখা টানার চেষ্টা শুরু হয় তখন ১১ আগস্ট, ২০১৬-এ সম্মেলনের আট সদস্যের প্রতিনিধিদল দিসপুরে বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের সঙ্গে দেখা করে এই প্রক্রিয়া বন্ধের জোরালো দাবি জানায়। বলা হয়, বাঙালিরাও যে এই রাজ্যে ভূমিপুত্র। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে খারিজ করা চলবে না। শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, প্রতিনিধিদল একই দিনে রাজভবনে গিয়ে তৎকালীন রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচারিয়া ও এন আর সি-র সমস্বরে ক্ষত প্রতীক হাজেলার সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করে একই অভিমত জানান। সব তরফ থেকেই সম্মেলনকে আশ্বাস দেওয়া হয় এন আর সি-র খসড়া তালিকায় 'আদি' এবং 'অ-আদি বাসিন্দা বলে কিছু থাকবে না। এই আশ্বাসের পরও আত্মতৃপ্তির কোন অবকাশ নেই। রাজ্য সরকার নতুনভাবে ভূমিপুত্র সংজ্ঞা নির্ধারণের উদ্দেশ্য নিয়ে গুয়াহাটিতে ইতিমধ্যে এক দফা বৈঠক করেছে। পরিতাপের বিষয়, ওই বৈঠকে বাঙালিরা ছিল পুরোপুরি ত্রাতা। সব জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ডাকা হয়নি শুধু বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিস্থানীয় কাউকে। মুখ্যমন্ত্রী সানোয়াল এরপর অবশ্য ঘোষণা করেছেন, এই বিষয়ে দ্বিতীয় আরেক দফা বৈঠক ডাকা হবে শিলচরে। সেখানে অন্যান্যদের অভিমত নেবে সরকার। সম্মেলনের তরফে গত ১০ জানুয়ারি, ২০১৭-এ মুখ্যমন্ত্রীকে এক চিঠি লিখে এ ব্যাপারে তাঁর ঘোষণাকে স্বাগত জানানো হয়। তবে বলা হয়, বাঙালিকে ব্রাত্য রেখে কোন প্রক্রিয়া চললে তা মেনে নেওয়া হবে না। কারণ বাঙালি ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের ভূমিপুত্র।

আবার আক্রান্ত ভাষার অধিকার

বরাক উপত্যকার বহু সংগ্রামে আত্মত্যাগে বাংলাভাষার যে অধিকার সরকারিভাবে স্বীকৃত হয়েছে তা কেড়ে নেবার জন্য ধারাবাহিকভাবেই চেষ্টা চলছে। ইতিপূর্বে পূর্বতন তরুণ গগৈ সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল সম্মেলন আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে সমর্থ হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই বরাকের বাঙালির জাতি পরিচয় ভুলিয়ে দিতে, সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি খারিজ করে দেবার জন্য নতুনভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনই প্রথম সংগঠন যে বিবৃতি দিয়ে কেটীয় মন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে নিন্দা জানার। এই ইস্যুতে গত ১৬, ১৭৩-২১ ডিসেম্বর ২০১৬-এ তিন জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় হাইলাকান্দি, শিলচর ও করিমগঞ্জে ধর্না কর্মসূচি পালন করা হয়। ওখানে রাজেন গোঁহাইকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি আনানোর পাশাপাশি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বাঙালি ও বরাকের ভাষা নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন তারও নিন্দা জানায় সম্মেলন।

উপত্যকায় ভাষা আইন লঙ্ঘনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সত্ত্বেও সম্পূর্ণভাবে তা বন্ধ হয়নি। ১১ আগস্ট, ২০১৬-এ নিসপুরে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালকে সম্মেলনের তরফে স্মারকপত্র দিয়ে বলা হয় বরাক উপত্যকার ভাষা আইন লঙ্ঘনের সমস্ত সরকারি চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উপত্যকায় ভাষা আইন অনুসারে সরকারি কাজ যাতে বাংলায় করা হয় সে ব্যবস্থা নেবার দাবিও জানানো হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আবাসন প্রকল্প (গ্রামীণ) নিয়ে অসমিয়া ভাষায় মুদ্রিত পুস্তিকা উপত্যকায় বিতরণ করা হয়েছে। সম্মেলন তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইতিপূর্বে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কে নিযুক্তির পরীক্ষায় কেবলমাত্র অসমিয়া ভাষা বাধ্যতামূলক করায় সম্মেলন তার প্রতিবাদ জানায় এবং অসমিয়ার সঙ্গে বাংলাকেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি পেশ করে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই দাবি মেনে নিয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, ভাষা আইন লঙ্ঘন ও মাতৃভাষার অধিকার খর্ব করার সরকারি-বেসরকারি চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধারাকে আরো সমন্বিত করা এবং এ সম্পর্কে জনচেতনা তৈরির প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষার আর্জি

নাগরিকত্ব ও এন আর সি নিয়ে এ রাজ্যে আতঙ্কের আবহ যখন বিস্তৃত হচ্ছে, সে সময় আন্তর্জাতিক সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশী। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীদের উপর ক্রমাগত হামলা এবং নরসংহারের ঘটনায় এ পারে উদ্বেগের মাত্রা বাড়ছে। বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন এই ঘটনাপ্রবাহে উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করে ৯ জুলাই, ২০১৬-এ ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলির কাছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে পত্র পাঠিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও মুক্তমনাদের নির্যাতন ও হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধে আরো পরিকল্পিত ও কার্যকর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেবার দাবি জানায়। পত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষার ব্যবস্থা না নিলে ক্রমাগত মানব হত্যার প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। সম্মেলন ভারতীয় উপ-মহাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার গোপন অভিসন্ধিকে যদি অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়া না যায় তাহলে এক জটিল মানবিক ও রাজনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।

মণিপুরে বাঙালি নির্যাতন

প্রতিবেশী রাজ্য মণিপুরের ঘটনাক্রমও বরাক উপত্যকায় উদ্বেগের মাত্রা বাড়াচ্ছে। কিছুদিন পর পরই ওই রাজ্যে বাঙালি নির্যাতনের দরুন সেখানে তাদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জিরিবাম সহ অন্যান্য এলাকায় জাতিবিদ্বেষী হিংসাশ্রয়ী ঘটনা কিছুদিন পরপর চলতে থাকায় তা বন্ধ করতে সম্মেলনের তরফে ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ও ২৭ জুলাই ২০১৬-এ সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইরোবি সিংহের কাছে পরপর দুটো চিঠি দিয়ে মণিপুরে বসবাসকারী বাঙালির জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবার দাবি জানানো হয়। বাঙালি ও মণিপুরি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সুদীর্ঘকালের সুসম্পর্ক ও নিবিড় আত্মিক বন্ধনের কথা উল্লেখ করে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, হিংসার আবহ অব্যাহত থাকলে সম্প্রীতির পরিবেশও নষ্ট হবার শঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মণিপুরি ভাষিক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে শিলচর বঙ্গভবনে বৈঠকও করেছে সম্মেলন। ওখানে হিংসা দমন এবং বাঙালি-মণিপুরি সুসম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে যাতে কোন অন্তরায় তৈরি না হয় সে সম্পর্কে সহমত ব্যক্ত করা হয়। সম্মেলনের পরামর্শে মণিপুরি সমাজের পক্ষেও মণিপুরে শাস্তি এবং সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন জানানো হয়েছে।

অবরুদ্ধ বরাক, প্রভু সকাশে সম্মেলন

বিরাট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ ব্যস্থার আধুনিকীকরণ না হওয়ায় উপত্যকার আর্থিক বিকাশের পথ এখনো অবরুদ্ধ। এই অঞ্চলের আভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী যোগাযোগ পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্মেলনের তরফে সময়ে সময়ে পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাড়কারি, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে চিঠি পাঠিয়ে দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তাদের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্নলালিত শিলচর-সৌরাষ্ট্র মহাসড়ক প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়িত হবে কী না এ নিয়ে সংশয় প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। আঠারো বছর প্রতীক্ষার পর ব্রডগেজের স্বপ্নপুরণ হলেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। স্থানীয় চাহিদাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বর্ষা এলেই পাহাড় লাইন মুখ থুবড়ে পড়ে। বাংলাদেশের সঙ্গে উপত্যকার রেল যোগাযোগের দাবি সরকার নীতিগতভাবে মেনে নিলেও লাল ফিতার বাধনমুক্ত হয়ে কাজ এখনো কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬-এ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু শিলচর এলে আবর্ত ভবনে সম্মেলনের তরফে তার সঙ্গে বৈঠকে এ সংক্রান্ত সমস্যা ও প্রত্যাশার বিষয়গুলো জানানো হয়। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কলকাতা থেকে মহিশাসন-করিমগঞ্জ-শিলচর রেল যোগাযোগ রেলমন্ত্রকের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে বলে প্রভু সম্মেলনকে আশ্বাস দিয়েছেন।

স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্ষদ

বরাক উপত্যকার সার্বিক বিকাশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবিতে সম্মেলন অবিচল রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এই দাবির সপক্ষে জনমত গঠনের জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপত্যকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের প্রধানদের কাছে এ সম্পর্কিত খসড়া দাবিপত্র তুলে দিয়ে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। গত দু বছরে শিলচর বঙ্গভবনে বহুভাষিক সমন্বয় সমিতির কাঠামোয় স্থানীয় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ওখানে খসড়া দাবিপত্র তাদের হাতে দিয়ে। সাংগঠনিক স্তরে মতামতও চাওয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে কেউ দাবির বিরোধিতা না করলেও সাংগঠনিকভাবে মতামত এখনো মেলেনি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টির বিরোধিতা না করলেও সমর্থনে সরব হতে তেমন আগ্রহী নন বলেই মনে হচ্ছে। নাগরিকত্ব ইস্যুর জন্য বিষয়টি এই সময়ে প্রত্যাশিত গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে।

বি এড থেকে ডি এল এড : বাংলার জন্য সংগ্রাম

শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু জ্বলন্ত সমস্যা নিয়েও সম্মেলনকে গত দু-বছর কর্মতৎপর থাকতে হয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক বিভাগ বিএড কোর্সের পাঠ্যক্রমে বাংলা বাদ দেবার এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে সম্মেলনের তরফে সঙ্গে সঙ্গেই ১২ এপ্রিল, ২০১৬-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বন্ধু আর ধামালাকে পত্র দিয়ে বি এতে বাংলাকে কার স্বার্থে ব্রাত্য করা হল সে প্রশ্ন তুলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, ভাষা শহিদের উপত্যকায় গড়ে ওঠা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদল না হলে পরিস্থিতি জটিল হবে। সম্মেলনের দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বি এডে বাংলা ভাষা যথারীতি অন্তর্ভুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডি এল এড পাঠ্যক্রমেও বাংলাকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র অসমিয়া ও ইংরেজি রাখা হয়েছিল। বিষয়টি সম্মেলনের নজরে আসার পর অবিলম্বে বাংলা পাঠ্যক্রম চালুর দাবি জানানো হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করলে ১২ আগস্ট, ২০১৬-এ সম্মেলনের এক প্রতিনিধিদল গুয়াহাটিতে গিরো উপাচার্য হিতেশ ডেকার সঙ্গে বৈঠকে বসে ডি এল এড পাঠ্যক্রমে বাংলা না থাকায় পাঠরতদের কী অসুবিধা হচ্ছে সেটা সবিস্তারে জানান। তাকে জানানো হয় উপত্যকার প্রধান ভাষা বাংলাকে কোনওভাবেই ব্রাত্য রাখা যাবে না। উপাচার্য হীতেশ ডেকা সম্মেলনের দাবি মেনে সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন। এই আশ্বাস কার্যকরী করতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলচর কাছাড় কলেজ সেন্টার থেকে বাংলা বই প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ মাসেই তা উপত্যকায় পৌঁছে যাবে। বলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যবই অনুবাদ

রাজ্যের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়ুয়াদের হাতে বিশুদ্ধ বাংলায় লেখা পাঠ্যবই তুলে দেবার ব্যবস্থা নিতে আসাম মধ্য শিক্ষা পর্ষদের (সেবা) কাছে দাবি জানিয়েছিল সম্মেলন। সেই দাবি মেনে কিছু কিছু পাঠ্যবই অসমিয়া ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের দায়িত্ব সম্মেলনকে অর্পণ করে পর্ষদ। এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সম্মেলন ইতিমধ্যে নবম-দশম শ্রেণির জন্য 'খুচরো বিপণন ও তথ্য প্রযুক্তি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান বই অনুবাদ করে দিয়েছে। মধ্য শিক্ষা পর্ষদ রাজ্য মুক্ত বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বই অনুবাদের দায়িত্বও সম্মেলনকে দিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বইটি অনুবাদ শেষ করে ৭ জানুয়ারি, ২০১৭-এ তা পর্যদ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই অনুবাদ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ ও রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

সুরমা সাহিত্য সম্মিলনীর শতবর্ষ উৎসব

অবিভক্ত সুরমা-বরাক উপত্যকায় বাংলা সাহিত্য ধারায় সুরমা সাহিত্য সম্মিলনীর শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। উপত্যকার আত্মপরিচয় তুলে ধরার সংগ্রামে এটা এক ঐতিহাসিক ঘটনা। সুরমা সাহিত্য সম্মিলনীর শিলচর অধিবেশন ও 'শ্রীভূমি' পত্রিকা প্রকাশের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় বর্ষব্যাপী (২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫-২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬) অনুষ্ঠানমালায় উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই উৎসবে উপত্যকার বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষও অংশ নিয়েছেন।

‘ইশানের পুঞ্জমেঘ’ থেকে ‘ভাষা ও সংস্কৃতি : বরাক উপত্যকা’

সম্মেলনের সাহিত্য উপ-সমিতির উদ্যোগে দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর প্রকাশিত হয়েছে বরাক উপত্যকার নির্বাচিত কবিদের কবিতা সংকলন “ঈশানের পুঞ্জমেঘ' দ্বিতীয় খণ্ড। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে করিমগঞ্জে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বাদশ অধিবেশনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ' প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ডও প্রকাশিত হচ্ছে করিমগঞ্জে আয়োজিত এই ২৭তম দ্বিবার্ষিক অধিবেশনে। প্রথম খণ্ডের মত দ্বিতীয় খণ্ডও এই অঞ্চলের কাব্যচর্চার ধারাগুলোকে পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেছে।

ইতিমধ্যে ভাষা সংক্রান্ত সমস্যার আলোকে প্রকাশিত হয়েছে সম্মেলনের ভাষা আকাদেমি পত্রিকার নতুন সংখ্যা 'ভাষা ও সংস্কৃতি বরাক উপত্যকা'। বরাক উপত্যকার ভাষাচর্চার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে ভাষা আইন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র এই পত্রিকার পরিশিষ্টে সন্নিবিষ্ট রয়েছে। সময়ের প্রেক্ষাপটে পত্রিকাটি দলিল হয়ে থাকবে। পত্রিকার প্রকাশ উপলক্ষে হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় 'বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা : বিকৃতি ও বিভ্রান্তি' শীর্ষক দুটি স্বতন্ত্র মনোজ্ঞ আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ছোটগল্প প্রতিযোগিতা

সম্মেলনের সাহিত্য উপ-সমিতির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত বাংলা ছোটগল্প প্রতিযোগিতায় এবার বেশ ভাল সাড়া পাওয়া গেছে। বরাক ও তার বাইরে থেকে মোট ৩৮ জন গল্পকার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এতে বিভিন্ন স্থানাধিকারীদের হাতে ঊষারবদের প্রয়াত প্রবীণ শিক্ষক ও গল্প অনুরাগী সত্যেন্দ্রনাথ চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। পুরস্কারগুলোর ব্যয়ভার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।

গ্রামীণ লোকউৎসব

সম্মেলনের সংস্কৃতি উপ-সমিতির উদ্যোগে হাইলাকান্দি জেলার কালীনগরে পাঁচগ্রাম আঞ্চলিক সমিতির ব্যবস্থাপনায় ২৭ ২৮ আগস্ট, ২০১৬-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে দু-দিনের লোকউৎসব। এই উৎসবে উপত্যকার বিভিন্ন স্থান থেকে পনেরোটি লোক সাংস্কৃতিক দল ও বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পীরা অংশ নেন। এই উৎসবে লোকসংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনা ও সাহিত্য পাঠ কার্যক্রমকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছিল। গ্রামীণ এলাকার আঞ্চলিক সমিতির ব্যবস্থাপনায় এটি ছিল প্রথম পূর্ণাঙ্গ লোকউৎসব।

বরাক বইমেলা

বরাক বইমেলা বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের এক উল্লেখযোগ্য বার্ষিক কার্যক্রম। ২০১৫-এ এই মেলা আয়োজনে তেমন সমস্যা না হলেও ২০১৬-এ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে উপত্যকার তিন জেলায় মেলা করতে হয়েছে। ২০১৫-এ তিন জেলায় যেখানে ৩০ লক্ষ টাকার বই কেনাকাটা হয়েছে, সেখানে ২০১৬-এ নোটবন্দীর সমস্যার মধ্যেও এই ব্যবসার পরিমাণ ২০ লক্ষের কিছু বেশি।

কমলা ভট্টাচার্যের স্মরণে ডাকটিকিটের প্রস্তাব

ভাষা শহিদের উপত্যকায় মহিলা ভাষা শহিদ কমলা ভট্টাচার্যের স্মরণে একটি ডাকটিকিট প্রকাশের জন্য ডাক বিভাগের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। আনন্দের বিষয়, সম্মেলনের এই প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে ডাক বিভাগ। এটি বাস্তবায়িত হলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন সংযোজন হবে।

একইসঙ্গে ডাক বিভাগ সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির কার্যালয় বঙ্গভবন-এর ছবি সম্বলিত বিশেষ কভার প্রকাশের আর্জিতে সায় দিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬-এ তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। এটি দিল্লির মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থাও করেছে ডাক বিভাগ।

উপত্যকার নিজস্ব উত্তরীয়

বরাক উপত্যকার ঐতিহ্যখচিত একটি উত্তরীয় প্রকাশের জন্য সম্মেলনের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই প্রয়াসের সঙ্গে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপকদের যুক্ত করেছিল সম্মেলন। ইতিমধ্যে তারা নমুনা সম্বলিত প্রজেক্ট পেপার সম্মেলনের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সম্মেলনের নিজস্ব সঙ্গীত রচনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু রচিত সঙ্গীত সংস্কৃতি বিভাগের হাতে এসেছে। এটি বাস্তবায়নের পন্থা-পদ্ধতি গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেবে সংস্কৃতি বিভাগ ।

নিজস্ব ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি

শিলচরে টি ভি স্টেশন রোডে (চাঁদমারি রোড) সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির জমিতে নিজস্ব ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জমিতে প্রাক্তন সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থের সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থে প্রাচীর নির্মাণ হলেও মিউনিসিপাল হোল্ডিং ছিল না। ভবন নির্মাণের জন্য অপরিহার্য হোল্ডিং ইতিমধ্যে শিলচর পুরসভা থেকে পাওয়া গেছে এবং আগামী মার্চ পর্যন্ত সমস্ত করও পরিশোধ করা হয়েছে। এখন প্রস্তাবিত ভবনের নক্সা তৈরির জন্য প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছি

বর্তমান কার্যনির্বাহক সমিতি বিভিন্ন ধারায় কর্মসূচি রূপায়ণে আন্তরিকভাবে প্রয়াস চালিয়েছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ক্রমবর্ধমান কাজের চাপে কিছু কিছু ত্রুটি হয়তো থেকে গেছে। আপনারা সেটা সহৃদয় মন নিয়ে মার্জনা করবেন। আমার কার্যকালে সবাইকে নিয়ে, প্রত্যেকের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি, পেয়েছি সবার সহযোগিতাও। পরিশেষে সম্মেলনের আরো প্রসার এবং সাফল্য কামনা করে প্রতিবেদন শেষ করছি।

ভাষা শহিদ অমর রহে।



১৩ মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ
করিমগঞ্জ কলেজ, করিমগঞ্জ
(গৌতমপ্রসাদ দত্ত)
সাধারণ সম্পাদক
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিত, শিলচর
যোগাযোগ : ৯৪০১৫ ৯৪৯২৪