2015
report-2015-header
শ্রদ্ধাস্পদ সভাপতি ও সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ,

বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পঞ্চস্ত্রিংশৎ বার্ষিক কেন্দ্রীয় সাধারণ সভা সাধারণ সভায় সমাগত আপনাদের প্রত্যেককে জানাই স্বাগত অভিবাদন, আন্তরিক প্রীতি-নমস্কার।

সুধী,

ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্যকে সামনে রেখে উপত্যকার আত্মপরিচয় তুলে ধরে এখানকার সাহিত্য-সংস্কৃতি সহ সমস্ত সৃজনশীল কর্মের চর্চা ও বিকাশ এবং বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলকে সংঘটিত করে আর্থিক স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্য মাথায় রেখে আটত্রিশ বছর আগে যে সংঘটন যাত্রা শুরু করেছিল সা আজ সাবালকত্বের পথে। কালের যাত্রায় বহু পরীক্ষায় অনেকটাই সাফল্যের দাবিদার বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের এই ষড়বিংশতিতম অধিবেশন এক কঠিন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বাংলার রাষ্ট্রসীমা থেকে নির্বাসিত এই বরাকভূমিকে স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। সংগ্রাম ছাড়া কোনও কিছুই পায়নি এই উপত্যকা। বিভিন্ন ক্ষেতে উপেক্ষা, বঞ্চনা ও ষড়যন্ত্রের ফলে এই উপত্যকা এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ভাষিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থিক ক্ষেত্রে আজ আমরা বাস্তবিক পক্ষেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছি। আমাদের এই ভাষিক পরিচয় ভুলিয়ে দিতে শিকড় উৎপাটনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিত্য নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক বিশাকের সন্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তাকে চিরতরে পঙ্গু করে রাখতে গোপন কারসাজি চলছে। এই প্রজন্মের রুটি-রুজির পথগুলো বন্ধ হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। জাতীয় পরিকল্পনার ‘পূর্বে তাকাও’ নীতি, যা বর্তমান কেন্দ্র সরকারের পরিভাষায় ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি, তার পরিসরে এই অঞ্চল যাতে অত্যাধুনিক পরিকাঠামোউন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক করিডোরের সুফল না পায় সেজন্য ক্ষমতার অলিন্দ থেকে নিরবচ্ছিন্ন অন্তর্ঘাত চলছে। বিদেশি ইস্যুর পটভূমিতে ‘ডি’-ভোটার নিয়ে হেনস্তার মধ্যেই এবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এন আর সি) নবায়নের নামে জনগণকে এক ভয়ংকর নাগরিক নিগ্রহের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপের উপরই আমাদের ভবিষ্যৎ অনকখানি নির্ভর করছে।

ভাষার জন্য সংগ্রাম

মাননীয় প্রতিনিধিবৃন্দ,

বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিতি বিগত দু বছরের কার্যকালে উপত্যকার আত্মপরিচয় তুলে ধরা এবং ভাষিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অর্জিত-অধিকার রক্ষার প্রশ্নেই বেশি কর্মতৎপর ছিল। আসাম সরকারি ভাষা অইন ও বিধি অনুসারে বরাক উপত্যকের সরকারি ভাষা বাংলা। কিন্তু এই বিধানকে লঙ্ঘন করে এই উপত্যকায় অসমিয়া ভাষায় হোর্ডিং, বিজ্ঞাপন ও প্রচারপত্র প্রদান প্রায় রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সরকারি ও বাণিজ্য মহল তো বটেই, রাজনৈতিক পর্যায়েও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনকে ক্রমাগত লড়ে যেতে হচ্ছে।

এই পটভূমিতে গত ২১ জুলাই ভাষা শহিদ দিবসে কেন্দ্রীয় সমিতির উদ্যোগে ও উপত্যকার তিন জেলা সমিতির সহযোগিতায় শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে জেলা শাসকদের কাছে স্মারকপত্র দিয়ে ভাষা-আইন অনুসারে এই উপত্যকার সরকারি কাজে বাংলার অবাধ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। কিন্তু লক্ষ্য করা গেল এই দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে উল্টে রাজ্যের সাধারণ প্রশাসন বিভাগের তরফে উপ-সচিব গুরুদত্ত লস্কর বরাকের তিন জেলা শাসককে স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগের নির্দেশ অনুসারে উপত্যকায় সরকারি কাজে অসমিয়া ভাষা সুনিশ্চিত কেতে বলেন (চিঠি নং-জি এ জি বি ১৩৫/২০০৯/১৪৪, তারিখ ২০-০৬-২০১৪)। সঙ্গে চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগের পি এলসি ১৪/২০১১/৩৯ নম্বরের নির্দেশ মেনে অসমিয়া ভাষা ব্যবহার কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা নিরীক্ষণ করে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা শাসক ও মহকুমা শাসকদের বছরে অন্তত দুবার করে রাজনৈতিক (খ) বিভাগে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। ১০ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে রামকৃষ্ণনগরে সম্মেলনের চতুস্ত্রিংশৎ বার্ষিক কেন্দ্রীয় সাধারণ সভায় এই সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আপত্তি তুলে উপত্যকা জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। সরকারকে হুশিয়ারি দেওয়া হয় বরাক উপত্যকার ভাষার অধিকার খর্ব করার এই নির্দেশগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে এই অঞ্চলের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোনও মূল্যে তা প্রতিরোধ করবে। এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে প্রশাসনিক তরফে লিখিতভাবে অভয় দেওয়া হয় বরাকে সরকারি কাজে বাংলা ভাষাই বহাল থাকবে। কিন্তু সম্মেলন মূল নির্দেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে অবিচল থাকলে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর হস্তক্ষেপে রাজনৈতিক বিভাগের পক্ষ থেকে জারি করা ভাষা সংক্রান্ত নির্দেশ (পি এল সি ১৪/২০১১/৩৯ তারিখ ৩০-১১-২০১৩) প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সম্মেলনের দাবি মেনে রাজনৈতিক (খ) বিভাগ থেকে নতুন এক নির্দেশ (পি এল সি ১৪/২০১১/৪৭ তারিখ ০১-০১-২০১৪) জারি করে ঘোষণা করা হয় বরাক উপত্যকার সমস্ত সরকারি কাজে স্থানীয় সরকারি ভাষা বাংলাই ব্যবহার করা হবে। সরকারের এই ঘোষিত অবস্থান বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের আন্দোলনের এক বড় সাফল্য।

ইতিপূর্বে লোকসভা নির্বাচনে উপত্যকায় রাহুল গান্ধীর নামে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অসমিয়া ভাষার বড় বড় হোর্ডিং দেওয়া হয়। কিছু দলের তরফে অন্যান্য প্রচারপত্রও আসে অসমিয়া ভাষায়। এ নিয়ে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতি সবগুলো রাজনৈতিক দলের রাজ্য ও জেলা সভাপতিদের চিঠি দিয়ে ভাষা বিষয়ে বরাক উপত্যকার ভাবাবেগকে আঘাত না করতে বলা হয়। সম্মেলনের এই আর্জি মেনে অসমিয়া ভাষায় রাহুল গান্ধীর নামে হোর্ডিং নামিয়ে আনা হয়। অসমিয়া প্রচারপত্র বণ্টন থেকেও বিরত থাকে সব দল। তবে এনিয়ে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। আমাদের পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজরদারি রাখতে হবে। ভাষা আইন লঙ্ঘনের যে কোনও চেষ্টাই সম্মিলিত প্রয়াসে ব্যর্থ হতে পারে।

আসাম চক্তি ৬ নং ধারায় বিপদ

ভাষার জন্য এই লড়াইর মধ্যেই নতুন এক চক্রান্তের ছায়া দেখা যাচ্ছে। রাজ্যে অসমিয়া কে, এই প্রশ্ন তুলে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। এটা এমন সময় করা হচ্ছে যখন জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবায়ণের নামে পিঠে বিদেশি তকমা সেঁটে বাঙালিদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রজাল বপন করা হচ্ছে। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ প্রণব গগৈ গত ৪ মার্চ বিধানসভায় বলেছেন ‘অসমিয়া’র সংজ্ঞা নির্ধারণের সময় সহনশীল মনোভাব নেওয়া দরকার। জোর করে ভাষা চাপিয়ে দিলে রাজ্য বিভাজিত হয় তার অতীত নজির টেনে তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে সংযত পদক্ষেপ আবশ্যক। বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন বিধানসভা অধ্যক্ষের এই মতামতকে স্বাগত জানিয়ে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চায় বহুভাষিক আসাম রাজ্যে সব ভাষার প্রতি উদার ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণই রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখাতে সমর্থ হবে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি আসাম চুক্তির ৬ নং ধারা অনুসারে অসমিয়া জাতির রক্ষা করচের নামে সংখ্যালঘু ভাষাভাষীদের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা চলছে। এই চুক্তির আধারে অনসমিয়াদের নিযুক্তি ও বিকাশের দরজা প্রায় বন্ধ করে ফেলা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার কর্মপ্রার্থীদের নানা কৌশলে বঞ্চিত করা হচ্ছে। স্থানীয় শূন্যপদগুলোতেও স্থানীয় আবেদনকারীরা আর যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। নিযুক্তিতে বঞ্চিত, উপেক্ষিতদের বেদনা বিধানসভা ও লোকসভার ভেতরে বাইরে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিধিরাও নিরাশ করছেন। এই অবস্থায় উপত্যকার মানুষ আজ নিজেদের অস্তিত্ব, ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষা ও আর্থিক স্বাধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য বিকল্পের কথা ভাবছেন।

স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্ষদ

উপত্যকার পরিকাঠামো উন্নয়নের সমস্যা এবং আর্থিক স্বাধিকারের বিষয়টি নিয়ে সম্মেলন দীর্ঘদিন থেকে সরব। বহুভাষিক সমন্বয় সমিতির পরিসরে স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের জন্য দাবি জানিয়ে জনমতও গড়ার চেষ্টা চলছে। গত ১ মার্চ শিলচর বঙ্গভবনে এই সমন্বয় সমিতির বৈঠকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যন গঠনের দাবির প্রতি ফের সহমত পোষণ করা হয়েছে। স্থির হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্ষদ’-এর দাবি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সংগঠন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে ফের মতবিনিময় বৈঠকে বসবে।

আঞ্চলিক অর্থনীতি

প্রতিনিধিবৃন্দ,

বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন স্বশাসিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে এই অঞ্চলের পরিকাঠামো বিকাশের জন্য দফায় দফায় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে চিঠি, স্মারকপত্র নিয়ে আসছে। কেন্দ্র ও রেল দপ্তর ব্রডগেজের দাবি বাস্তবায়নের কাজ সিংহভাগই সেরে ফেলেছেন। এজন্য এরা ধন্যবাদাহ। কিন্তু শিলচর-সৌরাষ্ট্র মহাসড়কের স্বপ্ন এখনও অধরা। বন ও পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে রাজ্য সরকার যে লুকোচুরি খেলা খেলছে সেটা সরাসরি বরাক বিদ্বেষী মনোভাবেরই প্রতিফলন। বড়াইলে হঠাৎ অভয়ারণ্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত মহাসড়ক প্রকল্পকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। মহাসড়কেরা কাজে নানা স্থানেই কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আরেক সম্মিলিত আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সুতারকান্দিকে ট্রানজিট রুটের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা, বি সি আই এস করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার ও চিনকে বরাকের উপর দিয়ে সড়ক পথে একসূত্রে গেঁথে দেওয়ার প্রস্তাব কার্যকর করা, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও হাইওয়ের সঙ্গে বরাক উপত্যকাকে যুক্ত করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে সময়ে সময়ে চিঠি, স্মারকপত্র দিয়ে সম্মেলন দাবি জানিয়ে আসছে। এসব কার্যকর হলে উপত্যকার আঞ্চলিক অর্থনীতি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে মাথা তুলতে পারবে, কর্মসংস্থানের বর্তমান হতাশাজনক পরিস্থিতিও অনেকটা বদলাতে পারে। সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির প্রতিনিধিদল এ নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে গুয়াহাটি ও শিলচরে বৈঠক করে কথা বলেছেন। নতুন কেন্দ্র সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাড়কারি ও রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভূকেও চিঠি দিয়েছে।

পাঠ্যপুস্তক ও ভাষার বিশুদ্ধতা

সুধী,

সম্মেলন মনে করে ভাষিক আগ্রাসনের বহুমুখী দিককে প্রতিহত করতে হলে শুধু প্রতিবাদী আন্দোলনই যথেষ্ট নয়, বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ভেতরের লড়াইকেও জোরদার করতে হবে। এই ভাবনা মাথার রেখে পাঠ্যপুস্তকগুলোর ভাষা সংশোধন, শুদ্ধ বাংলা বানান এবং উপযুক্ত পরিভাষা সম্পর্কে সচেতনতা জাগানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আসাম মধ্যশিক্ষা পর্যনের তৎকালীন চেয়ারম্যান শান্তিকাম হাজরিকা ও পর্যনের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে গুয়াহাটির সেবা অফিসে অনুষ্ঠিত আমন্ত্রণমূলক বৈঠকে সম্মেলনের প্রতিনিধিদল বিশুদ্ধ বাংলার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, পাঠ্যক্রমকে মনোগ্রাহী এবং বরাকের কৃতী লেখকদের রচনা অন্তর্ভূক্তির জন্য তা ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করে। সেবা সম্মেলনের এই দাবিগুলোর অনেকটা মেনে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান বইগুলোর ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য সেবা পুনঃপরীক্ষার দায়িত্ব সম্মেলনের উপর অর্পণ করে। সেই কাজটি সম্মেলনের পক্ষে সুশান্ত কুমার পাল, সুরতচন্দ্র নাথ, জয়ন্ত দেবরায়, অপ্রতিম নাগ এই অরুণ কুমার পাল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে দিয়েছেন। পাশাপাশি নবম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ইতিহাস অংশটি আলাদাভাবে প্রকাশের জন্য অসমিয়া থেকে বাংলায় অনুবাদের দায়িত্বও সেবা সম্মেলনকে দিয়েছে। এ কাজটি সম্মেলনের পক্ষে করেছেন হিমাশিস ভট্টাচার্য ও বিকাশ চক্রবর্তী। এর আগে নবম শ্রেণির জন্য নতুন বৃত্তিমূলক বিষয় ‘খুচরো বিপণন ও তথ্যপ্রযুক্তি’ বিষয়ক রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের বারোটি খণ্ড অনুবাদের দায়িত্বও সম্মেলনের হাতে অর্পণ করে সেবা। এ কাজটি করে দিয়েছেন সঞ্জীব দেবলস্কর, সন্তোষরঞ্জন চক্রবর্তী, তমোজিৎ সাহা, জয়ন্ত দেবরায়, সুস্মিতা চক্রবর্তী, বিকাশ চক্রবর্তী ও তনুশ্রী রায়। এই সবগুলো কাজই সেবা দফতরে প্রশংসিত হয়েছে।

অনুবাদ ও পুনঃনিরীক্ষণ কাজের সঙ্গে ষষ্ঠ, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা বইকে আরো মনোগ্রাহী ও স্থানীয় লেখকদের লেখা অন্তর্ভুক্তির দাবির ব্যাপারে সম্মেলনের দাবিও সেবা মেনে নিয়েছে। এক্ষেত্রে সম্মেলনের অভিমতটি সঞ্জীব দেবলস্কর ও বিশ্বনাথ মজুমদার তৈরি করে দিয়েছেন। নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা বই নিয়ে আবৃত বৈঠকে যোগদানের জন্য সম্মেলনকে সেবার তরফে আমন্ত্রণ জানালে এখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন বিশ্বনাথ মজুমদার। সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই নিয়ে অনুরূপ বৈঠকে সম্মেলনকে আমন্ত্রণ জানালে তাতে আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তুষারকান্তি নাথ। ওই বৈঠকে তার সঙ্গে বিশুদ্ধ বাংলা পাঠ্যবই প্রণয়ন নিয়ে কথা বলেন কটন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মুক্তি চৌধুরী। সম্মেলনের অভিমত মেনে সর্বশিক্ষা ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে অনুরূপা বিশ্বাসের কবিতা, অমলেন্দু ভট্টাচার্য সংগৃহীত ধামাইল গান ও জ্যোৎস্না হোসেন চৌধুরীর ছড়া সংযোজিত হয়। নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে অনুরূপভাবে শক্তিপদ ব্রহ্মচারী ও মুজতবা আলির রচনাও অন্তর্ভুক্ত করে সেবা। সম্মেলনের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই গোটা কর্মকাণ্ডে সমন্বয়র ক্ষীর দায়িত্ব পালন করেন।

পাশাপাশি সম্মেলন বিশুদ্ধ বাংলা বানান ও পরিভাষা ব্যবহারের জন্য প্রশাসনের কাছে সময়ে সময়ে স্মারকপত্র দিয়েছে, বৈঠক করেছে। এই কাজের সঙ্গে ভাষিক আগ্রাসন প্রতিরোধ এবং উপযুক্ত বানান ও পরিভাষা নিয়ে সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়াতে করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে দুটি বানান কর্মশালার আয়োজন করে। এতে দুটি শহরে কর্মশালা প্রশিক্ষণ দেন যথাক্রমে জন্মজিৎ রায় এবং অমলেন্দু ভট্টাচার্য, নিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিতাভ চক্রবর্তী, ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ ও সঞ্জীব দেবলস্কর। আগামী বছর থেকে বরাকের তিন জেলায় নিয়মিতভাবে এ ধরনের কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে সম্মেলনের।

বরাক বইমেলা

এই অঞ্চলের সাহিত্য ও সৃষ্টিশীল রচনা প্রকাশ, প্রচার ও বিপণনের আবহ গড়ে তুলতে বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন নিবিড় পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রয়াসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড, কলকাতার সহযোগিতায় ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সম্মেলন 'বরাক বইমেলা'-র আয়োজন করছে। শিলচর, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জকে একসূত্রে গেঁথে প্রতি বছর প্রায় এক মাস ধরে এই বইমেলা উপত্যকায় যথেষ্ট উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। বইমেলা উপলক্ষে প্রতি বছর কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা কমিটির ব্যবস্থাপনায় সুসম্পাদিত স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। বরাক বইমেলার পরিসরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালে যেখানে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছিল, সেখানে ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। বরাক বইমেলাকে সফল করতে সম্মেলনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দু বছরই পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড, কলকাতার প্রাণপুরুষ ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এই উপত্যকায় সদলে ছুটে এসেছেন। দুই সংগঠনের এই নিবিড় বন্ধুত্বের সুবাদে গিল্ড এবার কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় বরাক টিপতাকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনকে বিনামূল্যে একখানা ঘর দিয়েছে। সম্মেলন প্রথমবারের মত বরাকের বই নিয়ে কলকাতা পুস্তকমেলায় যোগ দিয়ে ভাল সাড়া পেয়েছে। এই গোটা কর্মকাণ্ড সম্মেলনের সাফল্যের নয়া পালক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সম্মেলনকে এভাবে প্রকাশনা জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আমরা ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কলকাতা পুস্তকমেলায় সম্মেলনের স্টল পরিচালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় সমিতির সহ-সম্পাদক অনিল পাল, কাছাড় জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক হৃষীকেশ দেব ও সদস্য অপু রবিদাস। গোটা ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন শিলচরের গোবিন্দ কংসবণিক ও কলকাতার স্বনামধন্য গল্পকার রণবীর পুরকায়স্থ। এদের প্রত্যেককে জানাই অভিনন্দন।

সৈয়দ মুজতবা আলি সাহিত্য উৎসব

বিগত হাইলাকান্দি অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৪ সাল থেকে সম্মেলনের উদ্যোগে সৈয়দ মুজতবা আলি সাহিত্য উৎসব শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সাহিত্য উপ-সমিতির পরিকল্পনায় ও হাইলাকান্দি জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় গত ১৩, ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর হাইলাকান্দি নজরুল সদনে অনুষ্ঠিত তিনদিনের এই সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করেন ঈশান বাংলার প্রধান কবি ও লেখক বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য। এতে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার সাহিত্যিক আকবর আহমেদ ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য। এই উৎসবে উপত্যকার বিশিষ্ট লেখকদের সাহিত্য উৎসব সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মেলন স্থির করেছে, এখন থেকে প্রতি বছর পালাক্রমে এক একটি জেলায় মুজতবা আলি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করা হবে।

অন্যদিকে গত ৮ থেকে ১৪ জুলাই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি উপ-সমিতির পরিকল্পনায় ও হাইলাকান্দি জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় সাতদিনব্যাপী নাট্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন উপত্যকার বিশিষ্ট নাট্যকার শান্ত পাল। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সাহিত্য উপ-সমিতির পরিকল্পনা অনুসারে করিমগঞ্জ জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় গত ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর তিনদিনব্যাপী আবৃত্তি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন শ্যামলরঞ্জন দেব, রাজশেখর মিত্র মজুমদার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ওমপ্রকাশ দত্তচৌধুরী ও সুমিতা দাসদত্ত। এই দুটি কর্মশালাই হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি উপ-সমিতির পরিকল্পনায় ও কাছাড় জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় শিলচর বঙ্গভবনে একদিনের ধামাইল উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে।

বিপিনচন্দ্র পাল স্মারক বক্তৃতা

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির আরেক উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান বিপিনচন্দ্র পাল স্মারক বক্তৃতা ও অরুণকুমার চন্দ স্মৃতি সম্মাননা প্রদান। গত বছর ৭ চৈত্র (২২ মার্চ) করিমগঞ্জের বিবেকানন্দ কলেজ অব এডুকেশন মিলনায়তনে করিমগঞ্জ জেলা সমিতির ব্যবস্থাপনায় ‘৪র্থ বিপিনচন্দ্র পাল স্মারক বক্তৃতা’-র আয়োজন করা হয়। এতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটক ও চলচ্চিত্র স্বাগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব, ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার প্রাক্তন উপ-সভাপতি নতুনদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক লেখক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘নাটকে চলচ্চিত্রে বাঙালি ঘরানা’। ওইদিন তাঁর হাতে “অরুণকুমার চন্দ স্মৃতি সম্মাননা” তুলে দেওয়া হয়। শিলচরে প্রস্তাবিত ৫ম বিপিনচন্দ্র পাল স্মারক বক্তৃতা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েও তা করা সম্ভব হয়নি। নির্ধারিত বক্তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস তার প্রশাসনিক কাজের ব্যস্ততার জন্য শিলচরে আসার সফরসূচি চূড়ান্ত করেও পরিবর্তন করেন। অধিবেশনের পর এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা যাবে বলে আশা করছি।

প্রস্তাবিত নয়া প্রকাশনা

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাহিত্য উপ-সমিতির সিদ্ধান্ত ও কেন্দ্রীয় সমিতির অনুমোদনে ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ কাব্য সংকলনের পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত খপ্ত প্রকাশনার কাজ এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশের কাজেও হাত দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সম্পাদনা সমিতির সম্পাদনায় আগামী বইমেলায় এই দুই খণ্ড গ্রন্থ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বরাক উপত্যকার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থ প্রণয়নের জন্য অমলেন্দু ভট্টাচার্যকে আহ্বায়ক এবং 'বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ইতিহাস' গ্রন্থ প্রণয়নের জন্য নীতিশ ভট্টাচার্যকে আহ্বায়ক করে দুটি উপ-সমিতি গঠন করা হয়েছে। এই দুই উপ-সমিতি তাদের কাজ শুরু করেছে। অন্যদিকে সঞ্জীব দেবলস্করের সম্পাদনার ভাষা বিষয়ক “আকাদেমি পত্রিকা” প্রকাশের কাজও শেষের পথে। অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য প্রস্তাবিত সংখ্যাটি একটি দলিল হয়ে থাকবে।

পরিকাঠামো উন্নয়ন

গত দু বছরে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কিছু ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। কাছাড় জেলা সমিতির উদ্যোগ ও ঐকান্তিক পরিশ্রমে শিলচরে গড়ে উঠেছে বহু সুবিধাযুক্ত অত্যাধুনিক “বঙ্গভবন”। গত ১৪ নভেম্বর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এই ভবনটির উদ্বোধন করেন। প্রাক্তন মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বর্তমান উপদেষ্টা গৌতম রায় এই ভবন নির্মাণে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসায় এবং বিভিন্ন স্তরের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সমিতির তরফে গৌতম রায়, কাছাড় জেলা সমিতি, নির্মাণ উপ-সমিতি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইভাবে করিমগঞ্জে সম্মেলনের প্রাণকেন্দ্র বিপিন পাল স্মৃতি ভবন সম্প্রসারণে করিমগঞ্জ জেলা সমিতি উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এই ভবন সম্প্রসারণে বিশেষ সরকারি অনুদান মঞ্জুর করিয়ে এনেছেন। এখানেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে নিয়েছেন গৌতম রায়। খুব শীঘ্রই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। এজন্য গৌতম রায়, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, করিমগঞ্জ জেলা সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। হাইলাকান্দির বঙ্গভবনটি সম্প্রসারণের জন্যও হাইলাকান্দি জেলা সমিতি উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করা যায় ওখানে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে আমাদের জনপ্রতিনিধি ও সরকার এগিয়ে আসবেন। শিলচরে কেন্দ্রীয় সমিতির নামাঙ্কিত জমিটিতে প্রাক্তন সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থের সাংসদ তহবিলের মঞ্জুরিতে দেওয়াল দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে। ওখানে ভবন নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সমিতি। মিউনিসিপাল হোর্ডিং-এর নাম জারির জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসবেন বলে সম্মেলন আশা ব্যক্ত করছে।

গত দু বছরে সম্মেলনের কাজের পরিসর বাড়লেও সাংগঠনিক ক্ষেত্রে এখনও কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে সংগঠন প্রসারে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিগত দু বছরে কেন্দ্রীয় সমিতির ছুটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পর্ষদের দু'টি, সাহিত্য উপ-সমিতির তিনটি, সংস্কৃতি উপ-সমিতির দু'টি এবং ভাষা আকাদেমি, শিক্ষা অনুসন্ধান ও মুখপত্র উপসমিতির একটি করে সভা হয়েছে।

কৃতবিদ্যদের সম্মাননা

সম্মেলনের অধিবেশনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সৃজনশীল ভূমিকা ও বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে উপত্যকার চারজন কৃতবিদ্যকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারের বড়বিংশতিতম অধিবেশনে উপত্যকার প্রবীন গল্পকার বদরুজ্জমান চৌধুরীকে ভুবনেশ্বর বাচস্পত্তি এবং প্রবীন কবি জিতেন নাগকে রামকুমার নন্দী স্মৃতি সম্মাননা প্রদান করা হবে। ভাষা ও ইতিহাস গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য প্রবীন লেখক-গবেষক সুবীর করতে দেওয়া হবে প্রেমেন্দ্রমোহন গোস্বামী স্মৃতি ভাষা আকাদেমি সম্মাননা। গত অধিবেশনে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল ইতিহাসবিদ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য জয়স্তভূষণ ভট্টাচার্যকে। এই উপত্যকায় বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সমন্বয়ের বন্ধনকে সুদৃঢ় করার লক্ষে প্রবর্তিত অনুরূপা বিশ্বাস স্মৃতি সম্মাননা এবার দেওয়া হবে বিশিষ্ট বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি কবি ও লেখক ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহকে। গত অধিবেশনে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল বিশিষ্ট মণিপুরি লেখক ও অনুবাদক ওইনাম নীলকণ্ঠ সিংহকে।

সম্মেলনের ওয়েবসাইট

বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ইতিহাস, সংগঠন পরিচয় ও কাজকর্ম সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে নতুন একটি ওয়েবসাইট প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে সময়ে সময়ে নতুন তথ্য সংযোজন করা হবে। ওয়েবসাইটটি আইডি হচ্ছে www.barakupatyakabangasahitya.com।

সম্মেলনের হাইলাকান্দি অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সমিতি, তিন জেলা সমিতি ও আঞ্চলিক সমিতিগুলোর সহায়তায় সেটা পালনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। গত দু বছরে কাজের পরিসর অনেকখানি বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান কাজের চাপে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্রুটি হয়তো থেকে গেছে। এই কার্যকালে সহযোগিতার জন্য সম্মেলনের প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

পরিশেষে ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে ও বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের আরো প্রসার এবং সাফল্য কামনা করে প্রতিবেদন এখানে শেষ করছি।



৫ চৈত্র, ১৪২১ বঙ্গাব্দ
২০ মার্চ, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
বঙ্গভবন, শিলচর।
(গৌতমপ্রসাদ দত্ত)
সাধারণ সম্পাদক
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিতি।